দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের বহির্বিভাগ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকে লাইন দিয়ে আউটডোরের টিকিট কাটলেন রোগীরা। ঘণ্টা তিনেক পরে জানলেন, এ দিন রোগী দেখবেন না চিকিৎসকেরা। হতাশ হয়ে ফিরে যাওয়ার আগে তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘যদি রোগী না দেখা হবে তবে টিকিট কেন দিলেন হাসপাতালের কর্মীরা?’’ সোমবার বিকেলে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকের আগে এমন ছবিই দেখা গেল দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। আসানসোল জেলা হাসপাতালে এ দিনও গাড়ি রাখার জায়গায় ম্যারাপ বেঁধে বহির্বিভাগের রোগী দেখেন চিকিৎসকেরা। তবে নবান্নের বৈঠকের পরে সন্ধ্যায় চিকিৎসকেরা জানান, আজ, মঙ্গলবার থেকে স্বাভাবিক পরিষেবা মিলবে হাসপাতালে।
এনআরএস-কাণ্ডের জেরে পরিষেবায় বিশেষ প্রভাব রবিবার পর্যন্ত দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে দেখা যায়নি। সোমবার দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা এসেছিলেন বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য। লাইন দিয়ে হাসপাতালের কর্মীদের কাছে টিকিট নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও রোগী দেখা শুরু হয়নি। বহির্বিভাগে কোনও চিকিৎসককেও দেখা যায়নি। আরও ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে রোগীরা জানতে পারেন, এ দিন আর চিকিৎসা হবে না।
এ কথা শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। তাঁদের দাবি, আগে জানলে এই গরমে অযথা সময় নষ্ট করতেন না তাঁরা। মেনগেট এলাকা থেকে এসেছিলেন পেশায় ভ্যানচালক আব্দুল রজ্জাক। তিনি জানান, পেটের ব্যথায় ভুগছেন। দিন কয়েক আগে চিকিৎসককে দেখিয়ে গেলেও তা কমেনি। তাই এ দিন আবার এসেছিলেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে তিনি বলেন, ‘‘ডাক্তার দেখানো হল না। আগে জানলে সকালেই ফিরে যেতাম। এখন চড়া রোদে ফিরতে হবে।’’ ভিড়িঙ্গি চাষিপাড়া থেকে এসেছিলেন অন্তঃসত্তা সীতা রায়। এ দিন ডাক্তার দেখানোর দিন ছিল। চিকিৎসককে না পেয়ে ফিরে যাওয়ার সময়ে তিনি বলেন, ‘‘হাঁটাচলায় কষ্ট হচ্ছে। হাসপাতালের তরফে নোটিস দিলে বা টিকিট নেওয়ার সময়েই জানালে আমাদের এতটা ভুগতে হত না।’’
এনআরএস-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন দেশ জুড়ে আইএমএ-র ডাকে ধর্মঘট ছিল। সরকারি, বেসরকারি সব হাসপাতালেরই বহির্বিভাগ পরিষেবা বন্ধ ছিল। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাসের সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে হাসপাতালের একটি সূত্রের দাবি, আজ, মঙ্গলবার থেকে পরিষেবা স্বাভাবিক থাকবে।
গত কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করে দুর্গাপুরের শোভাপুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ পরিষেবা বন্ধ রেখেছিলেন পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তারেরা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকের পরে বদলেছে পরিস্থিতি। মঙ্গলবার থেকে পরিষেবা স্বাভাবিক থাকবে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আসানসোল হাসপাতালে দিন তিনেক ধরেই চিকিৎসকেরা তাঁদের গাড়ি রাখার জায়গায় ম্যারাপ বেঁধে বহির্বিভাগের চিকিৎসা করছিলেন। সোমবারও তা চালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। তবে সুপার নিখিলচন্দ্র দাস জানান, কোনও পরিষেবা ব্যাহত হয়নি। জরুরি পরিষেবাও চালু ছিল। সন্ধ্যায় চিকিৎসক সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় জানান, আজ, মঙ্গলবার থেকে বহির্বিভাগে স্বাভাবিক পরিষেবা শুরু হবে। আইএমএ-র আসানসোল শাখার প্রাক্তন সম্পাদক রহুল আমিন বলেন, ‘‘রোগীদের সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের কথা ভেবে আমরা প্রতিবাদে নেমেছিলাম। মঙ্গলবার থেকে সমস্যা থাকবে না।’’