শোকার্ত শিউলি মল্লিক। নিজস্ব চিত্র
লোকসভা ভোটের ফল। জেলার একাধিক কেন্দ্রে দলের ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামার খবরে রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের। নিজের পঞ্চায়েত এলাকা শ্রীরামপুরেও পিছিয়ে গিয়েছিল দল। ফোনে তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন বেগপুরের নেতা ইনসান মল্লিক। তাঁর দাবি ছিল, বেগপুরের গণনা শুরু হতেই ছবিটা পাল্টাবে। হলও তাই। পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রে যে ২২ হাজার ভোটে ‘লিড’ পায় তৃণমূল, তার মধ্যে দশ হাজারই বেগপুরের।
শুক্রবার রাতে ইনসান মল্লিক খুন হন। শনিবার স্বপনবাবু বলেন, ‘‘একটি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে সাড়ে দশ হাজার লিড এনে দেওয়া মুখের কথা নয়। নিঃসন্দেহে দক্ষ সংগঠক ছিল। ওর মৃত্যুতে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় সুলতানপুর, কাঁকুরিয়া এবং বেগপুর এলাকা নিয়ে কাজ করলেও কয়েকমাস আগে তার উপরে ‘হামলা’র পরে, শুধু নিজের পঞ্চায়েত এলাকাতেই বেশি সময় দিতেন ইনসান মল্লিক। কৃষক বন্ধু, সহায়ক মূল্যে ধান কেনা, দুর্যোগের পরে চাষিদের ক্ষতিপূরণ সময়ে মেলা-সহ নানা কাজে তিনি বিশেষ উদ্যোগী ছিলেন। বেগপুর পঞ্চায়েতেও গতানুগতিক চাষ থেকে বেরিয়ে ‘এনআরজিএস’ প্রকল্পে কলা, লেবু, পেঁপের মতো বিকল্প চাষের এলাকা বাড়ান তিনি। বেগপুর সমবায় সমিতির সম্পাদকও ছিলেন ওই নেতা। এই সমবায় চাষিদের জন্য হিমঘর গড়ার উদ্যোগ করে। এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পের ব্যবহারও করেন কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির এই কৃষি কর্মাধ্যক্ষ। সমবায়ে ধান কাটার আধুনিক যন্ত্রও আনেন তিনি। সম্প্রতি বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা এই সমিতি পরিদর্শন করে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
এ দিন ওই সমবায়ের ম্যানেজার দেওয়ান শেখ বলেন, ‘‘মানুষের ভালর জন্য নতুন নতুন কাজ করতে ভালবাসতেন। সব তছনছ হয়ে গেল।’’ এলাকার চাষিরা জানান, ওই নেতার উদ্যোগেই গ্রামে গ্রামে ছোট সাব-মার্সিবল পাম্প বসায় পঞ্চায়েত। এলাকার মেধাবী পড়ুয়াদের জন্য ল্যাপটপের ব্যবস্থা করেন তিনি। ব্যাক্তিগত ভাবে কয়েকজন ক্যানসার আক্রান্তকে সাহায্য করতেন।
এলাকার বাসিন্দা বিজয় মল্লিক বলেন, ‘‘যে কোনও প্রয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। সবার আগে প্রাপ্য নিয়ে সরব হতেন। বড় ক্ষতি হয়ে গেল। এলাকার এত উন্নয়ন আর হবে কি না, জানি না।’’