তিন দিন ধরে এই খনিতে কাজ বন্ধ হয়ে আছে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
তিনি এলাকার তৃণমূল বিধায়ক এবং মেয়র, এই দু’জনেরই ‘প্রতিনিধি’। এমনই দাবি করে অরবিন্দ চট্টরাজ নামে এক তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা বিসিসিএল-এর খনির কাজ তিন দিন বন্ধ রাখা এবং বৈঠক ভেস্তে দেওয়ার অভিযোগ উঠল পশ্চিম বর্ধমানের কুলটিতে। শুক্রবারের ঘটনা।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে বিসিসিএল-এর চাচ ভিক্টোরিয়া এরিয়ার দামাগড়িয়া প্রকল্পের বড়িরা এ খোলামুখ খনির কাজ বন্ধ রেখে অরবিন্দবাবুর ‘নেতৃত্বে’ আন্দোলন করছেন প্রায় ২০ জন জমিদাতা। জমিদাতাদের তরফে বিমান দত্তের অভিযোগ, ‘‘খনি কর্তৃপক্ষ জমি নিলেও আমাদের এখনও অনেকেই চাকরির নিয়োগপত্র পাননি। অনেকের জমিও রেজিস্ট্রি করা হয়নি।’’
এই পরিস্থিতিতে সমাধান-সূত্র বার করতে শুক্রবার দামাগড়িয়া প্রকল্পের এজেন্ট রাজু গুপ্ত জমিদাতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কর্তৃপক্ষের দাবি, আলোচনা খুবই ইতিবাচক পরিবেশে চলছিল। রাজুবাবু বলেন, ‘‘আলোচনার মাঝে হঠাৎই নিজেকে তৃণমূল নেতা পরিচয় দিয়ে অরবিন্দ চট্টরাজ নামে এক ব্যক্তি বৈঠকে ঢোকেন। তিনি নিজেকে আসানসোলের মেয়র ও কুলটির বিধায়কের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে জানান, তৃণমূলের নির্দেশ অনুসারে জমি রেজিস্ট্রি না করা হলে ও জমিদাতাদের চাকরি দেওয়া না হলে খনির কাজ চালু করতে দেওয়া হবে না।’’ এর পরেই বৈঠক ভেস্তে যায়। কুলটি থানায় অরবিন্দবাবুর নামে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান এরিয়ার জিএম সিদ্ধার্থশঙ্কর দাস। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বিষয়টি আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও কুলটির তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কেও জানিয়েছেন খনি কর্তৃপক্ষ।
এ দিকে, বিধায়ক উজ্জ্বলবাবু বলেন, ‘‘ঠিক কী ঘটেছে, খোঁজ নিচ্ছি। খনি কর্তৃপক্ষকে জমিদাতাদের সঙ্গে ফের বৈঠক করার পরামর্শ দিয়েছি। দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে কয়লা উত্তোলন চালুর ব্যবস্থা করা হবে।’’ মেয়র তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তবে কাজ বন্ধ রাখা তৃণমূলের সংস্কৃতি নয়।’’ যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই অরবিন্দবাবু সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে দাবি করেন, ‘‘জমিদাতারা ডেকেছিলেন বলেই তাঁদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছি। কোথাও মেয়র ও বিধায়কের প্রতিনিধি পরিচয় দিইনি। আমার বিরুদ্ধে খনি কর্তৃপক্ষ মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।’’
পাশাপাশি, জমিদাতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জিএম সিদ্ধার্থশঙ্করবাবু জানান, গত সোমবার পর্যন্ত প্রায় ১১ জন জমিদাতাকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। বাকিদের নিয়োগপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাঁদের ফাইল এখন হেড কোয়ার্টারে রয়েছে। খুব দ্রুত সেগুলি ছাড়া হবে। সেই সঙ্গে, বিসিসিএল কর্তৃপক্ষ জানান, দ্রুত কয়লা উত্তোলন ফের শুরু করা না হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থা এলাকা ছেড়ে চলে যাবে বলে জানিয়েছে। সে ক্ষেত্রে কয়লার অভাবে রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন মার খেতে পারে। রাজ্য সরকারের রাজস্ব হারানোর সম্ভাবনাও তৈরি হবে।