প্রতীকী ছবি
সংক্রমণের হার ক্রমেই চড়ছে। সোমবার এক দিকে ৫৪ জন করোনা আক্রান্ত ধরা পড়েছে জেলায়। তার মধ্যে দু’জন পুলিশ আধিকারিক, কয়েকজন ডাক্তারও রয়েছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, মোট পরীক্ষার ১৪ শতাংশ করোনা আক্রান্ত স্রেফ বর্ধমান শহরেই রয়েছেন। এর পরেই রয়েছে কেতুগ্রাম ১ (১০%), কালনা ১, মেমারি ২ (৬%) ও কাটোয়া শহর, মঙ্গলকোট (৫%)। এই পরিস্থিতিতে শহরবাসী আংশিক বা এলাকা ভিত্তিক নয়, সম্পূর্ণ ‘লকডাউন’ করার দাবি তুলেছেন। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে বিষয়টি নিয়ে।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী সোমবার সকালে বলেন, “বর্ধমান শহরে সংক্রমণ বাড়ছে। মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। জেলা সদরকে সম্পূর্ণ লকডাউন করা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। প্রশাসনিক মহলে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ কেতুগ্রাম ১ ব্লক ও কাটোয়া শহরেও সম্পূর্ণ ‘লকডাউন’ করা যায় কি না, তা ভাবা হচ্ছে। প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, এ দিন সন্ধ্যায় অনলাইন-বৈঠকে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বর্ধমান শহরের পরিস্থিতি উল্লেখ করে করোনা-সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে গেলে সম্পূর্ণ ‘লকডাউন’-এ যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। পুলিশের তরফেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
শহরের ব্যবসায়ীদের একাংশও পুরোপুরি ‘লকডাউন’-এর পক্ষে সওয়াল করেছেন। ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠনের নেতা চন্দ্রবিজয় যাদব বলেন, “এক দিকের দোকান খোলা, আর এক দিক বন্ধ—এ ভাবে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বরং একটি দোকানে ভিড় উপচে পড়বে। তার চেয়ে আগের মতো লকডাউন করলে ভাল হয়। নিজেরা বাঁচলে তবেই না দোকান খুলতে পারব।’’ বর্ধমান আদালতের আইনজীবী রাজদীপ গোস্বামীও মনে করেন, “যে গতিতে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে লকডাউনেরই প্রয়োজন। সচেতনতা প্রচার করে লাভ হবে না।’’ শিক্ষক অরূপ চৌধুরীরও দাবি, “নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিয়ে অন্তত ১০ দিন লকডাউন করুক প্রশাসন।’’ কার্জন গেট এলাকার একটি চায়ের দোকানদারেরও কথায়, “ভিড় বাড়ছিল। এখন আড্ডা হচ্ছে। লকডাউন হোক। লোকসান হলেও সংক্রমণের হাত থেকে তো বাঁচব।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, “সোমবার বর্ধমান শহরে ন’জন আক্রান্ত হয়েছেন। জেলা সদরকে বাঁচাতে গেলে সম্পূর্ণ লকডাউন প্রয়োজন বলে প্রশাসনকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতর শহরের চার জায়গায় ‘ফ্লু-ক্লিনিক’ খুলেছে। উপসর্গ থাকলে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। শহরকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য নিয়মিত স্প্রে করা, সংক্রমিতদের বাড়ি থেকে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বর্জ্যপদার্থ সংগ্রহ করার দাবি উঠেছে। বর্ধমান পুরসভার নির্বাহী আধিকারিক অমিত গুহ বলেন, “পুরসভা দায়িত্ব পালন করছে।’’