হুঁশ: বিক্রমপুর গ্রামে ছড়ানো হচ্ছে ব্লিচিং। নিজস্ব চিত্র
যা হয়নি এত দিনে, একটা মৃত্যুতে ঠিক তাই-ই হল।
ডেঙ্গিতে সমাপ্তি মেটের মৃত্যু নড়াল প্রশাসনকে। ওই বালিকার গ্রামে আসার ধুম লাগল প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের। ডেঙ্গি সংক্রমণে বুধবার দুপুরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় গলসি ১ ব্লকের সিরেরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিক্রমপুরের বাসিন্দা, ১১ বছরের সমাপ্তি। আর বৃহস্পতিবার সাত সকালেই স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান গ্রামে হাজির। একে একে গ্রাম ঘুরে গেলেন জেলা থেকে ব্লকের স্বাস্থ্যকর্তারা। গ্রাম ঘুরে রিপোর্ট সংগ্রহ করলেন ব্লক অফিসের কর্মীও।
কিন্তু, মশা মারার ব্যবস্থা হল কি?
বিক্রমপুর গ্রামের বাসিন্দারা এক কথায় জানিয়ে দিলেন, ‘না’। তাঁদের বরং অভিযোগ, মশা মারার জন্য ‘অচল’ ব্লিচিং ছড়িয়েই দায় সেরেছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর। তা-ও সব জায়গায় সেই ব্লিচিং দিয়ে যেতে পারেননি কর্মীরা। তা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। মৃত সমাপ্তির বাবা ধনঞ্জয় মেটে পেশায় লোকশিল্পী। গ্রামে-গ্রামে ও সরকারি অনুষ্ঠানে বাউল গান শোনান। তাঁর স্ত্রী বেলাদেবী গৃহবধূ। তাঁদের চার মেয়ের মধ্যে সমাপ্তি ছিল সেজো। সে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। পরিজনেরা জানালেন, কয়েক দিন আগে কাটোয়া শহরে বেড়াতে গিয়েছিল সমাপ্তি। সেখান থেকে ফিরে এসেই জ্বরে পড়ে। চার-পাঁচ দিন পরেও জ্বর-মাথা যন্ত্রণা-বমি কমছে না দেখে সমাপ্তিকে আদ্রাহাটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। দু’দিন ভর্তি থাকার পর আক্রান্ত হয়ে মারা যায় সে। ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা ‘ডেঙ্গি শক সিনড্রোম’।
স্থানীয়রা জানান, সমাপ্তির মৃতদেহ গ্রামে আসার পর থেকেই পঞ্চায়েত প্রধান সুশান্ত বাগদি, বিএমইওএইচ শেখ ফারুক, জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং গলসি ১ ব্লক দফতরের কর্মীরা ঘুরে গিয়েছেন। কিন্তু মশা মারার জন্য ধোঁয়া দেওয়া, স্প্রে করা, নিদেন পক্ষে এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা কিংবা আবর্জনা সাফাইয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতে দেখা যায়নি। দুপুরের দিকে স্বাস্থ্য দফতর ও পঞ্চায়েত ব্লিচিং নিয়ে এসে কিছু জায়গায় ছড়িয়ে চলে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা সমীর মেটে, সুশান্ত মেটেদের ক্ষোভ, “আমাদের পাড়ায় ৪৫ ঘর বাসিন্দা রয়েছে। অধিকাংশ পরিবারের শৌচাগারও নেই। ঝোপ-ঝাড় ভর্তি। নর্দমা বুজে গিয়েছে। আবর্জনার স্তূপ যেখানে সেখানে। সে সব পরিষ্কার করার কোনও উদ্যোগই নেই।” স্থানীয় মহিলা ঝিলিক বাগদি, মীরা বাগদিদের কথায়, “প্রশাসন ছুটে এলেও মশা মারার ব্যবস্থা করছে না। ব্লিচিং দিয়ে কি আর মশা মরে?”
পতঙ্গবিদদের একাংশেরও মতে, ব্লিচিং দিয়ে মশার উৎপাত কমানো যায় না। গলসি ১ ব্লকে গত ৬ মাসে ১৭ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে। তার পরেও হুঁশ ফিরল না কেন? পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায় জানান, এলাকা ঘুরে ধোঁয়া দেওয়ার কাজ চলছে। যদিও সে কথা মানতে নারাজ ওই এলাকার বাসিন্দা মতিয়ার রহমান থেকে সঞ্জয় পালরা। তাঁদের দাবি, “মশার জ্বালায় থাকা যাচ্ছে না। কোনও হুঁশ নেই প্রশাসনের।” পূর্ব বর্ধমান জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (ডিসিএমওএইচ-২) সুনেত্রা মজুমদারের অবশ্য আশ্বাস, আজ, শুক্রবার বিক্রমপুর-সহ বেশ কিছু গ্রামে ধোঁয়া দেওয়ার কাজ শুরু হবে।
সমাপ্তির মৃত্যু পরে আপাতত পাওনা বলতে শুধু ‘অচল’ ব্লিচিং।