ধরপাকড়। নিজস্ব চিত্র
অভিযুক্তের খোঁজে এসে আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ, এই অভিযোগে ফাঁড়ি ঘেরাও করেছিলেন বেশ কিছু বাসিন্দা। অভিযোগ, তাদের ছোড়া ইট, পাথরে জখম হন কয়েক জন পুলিশকর্মী। লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। জামুড়িয়ার কেন্দা ফাঁড়িতে রবিবার সকালে এই ঘটনায় ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জামুড়িয়ার সিপিএম বিধায়ক তথা ডোবরানা পঞ্চায়েতের নিউকেন্দার বাসিন্দা জাহানারা খানের বোন রোশনারা বেগম দিন পনেরো আগে কেন্দা ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ করেন, তাঁর বাবা প্রয়াত রমজান খান ২০০৮ সালে ডোবরানা গ্রামে প্রয়াত শ্যাম পাত্রের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা কাঠা দরে ১২ কাঠা জমি কেনেন। ২০১৬ সালে তাঁরা জমি পাঁচিল দিয়ে ঘিরতে গেলে শ্যামবাবুর ছেলে পবিত্র পাত্র আরও দশ লক্ষ টাকা দাবি করেন। রোশনারা দাবি করেন, ‘‘বাবা ইসিএলের কর্মী ছিলেন। অবসরের পরে পাওয়া টাকায় জমি কিনেছিলেন। বাবার স্মৃতিরক্ষায় আমি চেকের মাধ্যমে দু’দফায় ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ও নগদে দু’লক্ষ টাকা পবিত্রকে দিয়েছি। তার পরে পাঁচিল দিতে পেরেছি। অন্যায় ভাবে নেওয়া ওই টাকা ফেরত দেওয়া ও উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য লিখিত অভিযোগ করেছি।’’
জাহানারার দাবি, তিনি ২০১৬ সালে এ ভাবে টাকা চাওয়ার বিষয়টি তৃণমূলের জেলা নেতাদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। তিনি দাবি করেন, ‘‘কাটমানি-বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে বিধানসভায় আমি মুখ্যমন্ত্রীকে এই বিষয়টি জানাই। তার পরে দিন পনেরো আগে কেন্দা ফাঁড়ি থেকে বোনকে ডেকে পাঠিয়ে লিখিত অভিযোগ করতে বলা হয়। বোন তা দায়ের করেছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে পুলিশ পবিত্রর খোঁজে তাঁর বাড়িতে আসে। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের কয়েক জনের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয় বলে অভিযোগ। পবিত্রর ভাইপো গোপীনাথ পাত্রের স্ত্রী শিউলিদেবীর অভিযোগ, ‘‘অভিযুক্তের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর ব্যাপারে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের ও চার প্রতিবেশীর বাড়িতে ঢুকে তল্লাশির নামে হয়রান করেছে পুলিশ।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এ দিন এলাকার বেশ কিছু লোকজন কেন্দা ফাঁড়িতে বিক্ষোভ দেখাতে যান। এলাকার তৃণমূল নেতা রথীন কুণ্ডুর অভিযোগ, ‘‘নির্দোষদের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর নামে হয়রান করার প্রতিবাদ জানাতে আমরা ফাঁড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে আমাদের ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
পুলিশ অবশ্য জানায়, বিক্ষোভ দেখাতে এসে ফাঁড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। তাতে পুলিশের ছ’জন কর্মী-আধিকারিক জখম হন। লাঠি চালানোর কথা অস্বীকার করে পুলিশের দাবি, লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যেতেই বিক্ষোভকারীরা পালিয়েছে। পুলিশ কমিশনার ডিপি সিংহ বলেন, ‘‘হামলায় কয়েকজন পুলিশকর্মী সামান্য আহত হয়েছেন। ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ পুলিশের আরও দাবি, অভিযুক্তের বাড়িতে হানা দিতেই তিনি পালিয়ে যান। প্রতিবেশীদের বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছেন কি না দেখতে তল্লাশি হয়েছে। কাউকে হয়রান করা হয়নি।
পবিত্রর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। সিপিএম বিধায়ক জাহানারা জানান, শনিবার রাতে কী ঘটেছে, তা তাঁর জানা নেই।