Pradhan Mantri Awas Yojana

‘হুমকিতে’ ত্রস্ত্র অঙ্গনওয়াড়ি, আশাকর্মীরা

ভাতারের সেঁড়ুয়া গ্রামে সমীক্ষার পরে কেন তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ল, সে নিয়ে স্থানীয় কয়েক জনের ক্ষোভের মুখে পড়েন আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। Asha

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৪৯
Share:

ভাতার ব্লক অফিসে জমায়েত করে নিরাপত্তার দাবি কর্মীদের। নিজস্ব চিত্র

সমীক্ষার পরে আবাস যোজনার তালিকা থেকে নাম বাদ গিয়েছে অভিযোগে হুমকির মুখে পড়েন কালনার রুস্তমপুরের এক আশাকর্মী। বাড়িতে চড়াও হয়ে হুমকি দেওয়ায় তাঁর মেয়ে ভয় পেয়ে জ্ঞান হারান বলে অভিযোগ।

Advertisement

ঘটনা ২: ভাতারের সেঁড়ুয়া গ্রামে সমীক্ষার পরে কেন তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ল, সে নিয়ে স্থানীয় কয়েক জনের ক্ষোভের মুখে পড়েন আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। ভয়েতাঁরা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভিতর আটকে থাকেন।

ঘটনা ৩: সমীক্ষা থেকে নাম কেন বাদ গেল, সে প্রশ্ন তুলে বর্ধমান ১ ব্লকের এক আশাকর্মীর বাড়িতে কয়েক জন চড়াও হন। তাঁর বাড়ি লাগোয়া খড়ের পালুইয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

এই ঘটনাগুলি বিচ্ছিন্ন নয়। বরং, প্রতিদিনই ‘নাম যেন বাদ না পড়ে’ বা ‘বাদ পড়লে কী ভাবে কাজ করবে, দেখে নেব’— এমন হুমকির মুখে পড়ার অভিজ্ঞতা গত কয়েক দিনে তাঁদের বেশির ভাগেরই হয়েছে বলে অভিযোগ আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্লকে নিরাপত্তার দাবিতে তাঁরা একজোট হয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। মঙ্গলবার ভাতারের সেড়ুর গ্রামের আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা হুমকির মুখে পড়ার পরে, রাতে ব্লক অফিসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে প্রশাসন ‘সাহস’ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তার পরেও এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বুধবার থেকে ছুটিতে চলে গিয়েছেন। এ দিন ভাতার ব্লক প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেন আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, আবাস যোজনার ‘অযোগ্যেরা’ প্রতিনিয়ত তাঁদেরহুমকি দিচ্ছেন। জেলাশাসক প্রিয়ঙ্কা সিংলা বলেন, “সমীক্ষক দলকে সব রকমের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের সব রকম সাহায্য করা হচ্ছে।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, আবাস প্রকল্পের উপভোক্তা তালিকা সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত করতে একাধিক স্তরে যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গ্রামে তালিকা ধরে প্রথমে খোঁজ নিচ্ছেন আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। মূলত তাঁদের সমীক্ষার ভিত্তিতেই খসড়া তালিকা প্রকাশ হয়েছে। সেই তালিকা গ্রামসভায় অনুমোদন করা হয়েছে। ওই কর্মীদের অভিযোগ, প্রথম দিকে ‘নাম যেন বাদ না যায়’— এ ধরনের হুমকি ছিল। খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে ফোনে, বাড়ি এসে, রাস্তা বা কর্মস্থলে গিয়ে হুমকি, ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটছে। তাঁদের আশঙ্কা, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরে প্রকল্পের টাকা আসতে শুরু করলে, তাঁদের আরও সমস্যায় পড়তে হবে।

‘পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়ন’-এর পূর্ব বর্ধমান জেলার নেত্রী ঝর্না পালের অভিযোগ, “যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হচ্ছে জেলায়। কারও বাড়ির খড়ের পালুইয়ে আগুন লাগানো, কারও মেয়ে, শ্বশুরকে রাস্তায় হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। ভয়ে কর্মীরা মুখ খুলছেন না। আগামী সপ্তাহে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেব বলে জানিয়েছি।’’ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ইউনিয়নের জেলার নেত্রী রিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “সমীক্ষার কাজে যুক্ত থাকা কর্মীরা ত্রস্ত। আমরাও প্রতিটি ব্লকে স্মারকলিপি দিয়ে নিরাপত্তা চাইছি।’’

বিজেপির যুব মোর্চার বর্ধমান বিভাগের আহ্বায়ক সৌমেন কার্ফার দাবি, “তৃণমূলের স্বজনপোষণে যে সব আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছেন, তাঁদের উপরেইহুমকি-চড়াওয়ের ঘটনা হচ্ছে।“ তৃণমূলের জেলা যুব সভাপতি রাসবিহারী হালদারের বক্তব্য,“পুরো পদ্ধতিতে স্বচ্ছ্বতা আনতেই একাধিক স্তরে সমীক্ষা হচ্ছে। আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অসুবিধার দিকটি প্রশাসন দেখছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement