নির্দল হয়ে দাঁড়ানোর জন্য মনোনয়ের ফর্ম তুলেছেন তৃণমূলকর্মী রেখা সিংহ। নিজস্ব চিত্র।
আসানসোল পুরসভা নির্বাচনের জন্য বৃহস্পতিবারই প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছে তৃণমূল। সেই তালিকায় ঠাঁই হয়নি গত বারের বেশ কয়েক জন কাউন্সিলরের। তার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। কেউ কেউ নির্দল হয়ে ভোটে লড়ার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন। যদিও তৃণমূলের দাবি, দু-এক দিনের মধ্যেই মিটে যাবে এই বিক্ষোভ।
আসানসোল পৌরনিগমের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের দু’বারের কাউন্সিলর ছিলেন মীর হাসিম। মেয়র পরিষদ হিসাবে দু’বার মনোনীত হওয়ার পাশাপাশি পুরপ্রশাসক বোর্ডের সদস্যও ছিলেন তিনি। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে দল টিকিট দেয়নি তাঁকে। তার পর থেকেই ক্ষুব্ধ তিনি। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মীদের দাবি, হাসিম কাউন্সিলর হিসাবে এলাকায় ভাল কাজ করেছেন। তাঁর জনসংযোগ রয়েছে। উন্নয়নের কাজ করার পরও কেন তাঁকে প্রার্থী করা হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁর অনুগামীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এই ওয়ার্ডে প্রার্থী বদল না হলে নির্দল হিসাবে দাঁড় করানো হবে হাসিমকে। এ বিষয়ে হাসিম বলেছেন, ‘‘আমি দলের খারাপ সময় থেকে সঙ্গে রয়েছি। কখনও কোনও দলবিরোধী কাজ করিনি। এই ওয়ার্ডের মানুষ চাইছে দল আমাকে প্রার্থী না করলে নির্দল হয়ে আমি যেন ভোটে লড়াই করি। কর্মী-সমর্থকেরা যা চাইবেন তার ভিত্তিতেই আমি সিদ্ধান্ত নেব।’’
মীর হাসিমের মতো দলের প্রতি ক্ষুব্ধ ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর মহম্মদ জাফর আলি। ওই ওয়ার্ড মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় তাঁকে প্রার্থী করেনি দল। তবে স্ত্রীকে প্রার্থী করার জন্য দলীয় নেতৃত্বের কাছে আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু বৃহস্পতিবার প্রার্থিতালিকা প্রকাশের পর দেখা যায় নাম নেই তাঁর স্ত্রীর। এর পরই নির্দল হিসাবে স্ত্রীকে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। শুক্রবার স্ত্রীর জন্য মনোনয়নের ফর্মও তুলেছেন। ফর্ম তুলে বেরনোর সময় তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে, ‘‘২২ জানুয়ারি খেলা হবে।’’
স্ত্রীর জন্য মনোনয়নের ফর্ম তুললেন ৯৮ ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর মহম্মদ জাফর আলি। নিজস্ব চিত্র।
৫৯ এবং ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলরদের বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর সরোজ কর্মকার এ বারের পুরভোটে টিকিট পাননি। তার পরই নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য শুক্রবার তিনি ফর্ম তুলেছেন। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল হিসাবে দাঁড়ানোর জন্য মনোনয়ন দেবেন বলে জানিয়েছেন রেখা সিংহও। এদের মতো আরও বেশ কয়েকজন টিকিট না পাওয়া বিক্ষুব্ধ, এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে বিকেলে বৈঠক করবেন বলে জানা গিয়েছে। এলাকাবাসীদের মত নিয়ে তাঁরাও নির্দল হিসাবে লড়তে পারেন বলে জানা গিয়েছে।
ক্ষোভ বিক্ষোভ এতটাই বেড়ে গিয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূলের ভাইস চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি লিখতে হল প্রার্থী বদলের জন্য। শুক্রবার মলয় ঘটককে চিঠি লিখেছেন প্রার্থী বদলের অনুরোধ করেছেন। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, মীর হাসিম টিকিট না পাওয়ায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তার জেতারও সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তাঁকে যেন প্রার্থী করা হয়। তবে এ বিষয়ে দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই তূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন উজ্জ্বল।
যদিও আসানসোল জুড়ে কর্মীদের একাংশের এই বিক্ষোভকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে দেখছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাসু বলেছেন, ‘‘কারও কারও অভিমান হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে সমস্ত ক্ষোভ-বিক্ষোভ মিটিয়ে নেব। ভোটের আগে সবাই তৃণমূলের হয়েই কাজ করবেন।’’