আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালত। —ফাইল চিত্র।
কয়লাকাণ্ডে সিবিআই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। বুধবার ধৃতদের আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজির করানো হয়। সেই শুনানিতে আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী কড়া স্বরে সিবিআইয়ের উদ্দেশে বলেন, ‘‘সামনের মাসের ৩ তারিখ ‘চার্জ ফ্রেম’ কী করে করবেন, সেটা আপনারা দেখুন। না হলে আমি ‘চার্জ’ নিয়ে নেব।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘শেষ ১০ বছরে এমন একটা মামলা বলুন, যেটা সিবিআই ‘কমপ্লিট’ করেছে।’’ ওই সময় সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার কোনও মন্তব্য করেননি।
গত কয়েক বছর ধরে কয়লা পাচার মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তে সিবিআইয়ের কেন এত সময় লাগছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশেষ আদালত। মামলার দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে ক্ষুব্ধ বিচারক সিবিআইয়ের আধিকারিক এবং তাঁর আইনজীবীকে বলেন, ‘‘এফআইআরে যার প্রথম নাম রয়েছে, সেই ব্যক্তি, অর্থাৎ কোলিয়ারির কুনুস্তরিয়া এলাকার জিএম অমিতকুমার ধরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে প্রায় সাড়ে তিন বছর লেগে গেল আপনাদের? প্রায় এক থেকে দেড় বছর কোনও অভিযুক্তকে আপনারা গ্রেফতার করতে পারেননি। তা হলে তদন্ত কোন দিকে যাচ্ছে? এত সময় যদি লেগে থাকে তা হলে দ্বিতীয় অভিযুক্ত জিসি রায়ের ক্ষেত্রে কত বছর লাগবে আপনাদের?’’ বিচারকের সংযোজন, ‘‘কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের গতি যদি শ্লথ হয়, তা হলে আর কয়েক দিন পর ৩ জুলাই কী ভাবে আপনারা চার্জ গঠন করবেন, সেটা আমাকে বুঝিয়ে দিন।’’
আইনের বই বার করে সিবিআইয়ের আইনজীবীকে দেন বিচারক। কী ভাবে চার্জ গঠন করতে হবে, সেটা বই পড়ে দেখতে বলেন বিচারক। তিনি মন্তব্য করেন, চলতি বছরের এপ্রিলে অমিতকে গ্রেফতারির আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। কিন্তু, অভিযুক্তকে পাকড়াও করতে কেন তদন্তকারীদের মাস গড়িয়ে গেল, সেই প্রশ্নও তোলে আদালত।
শুনানির সময় সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘আপনি তা হলে এজেন্সিকে বলুন কী ভাবে তদন্তকে এগিয়ে নিয়ে যাবে তারা।’’ বিচারক তখন বলেন, ‘‘এটা আমার কাজ নয়। এই ক্ষমতাও আমার নেই।’’ সিবিআইয়ের তরফে তখন বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জ গঠনের চেষ্টা করবে।
লোকসভা ভোট মিটতেই আবার ‘অতি তৎপর’ সিবিআই। কয়লাকাণ্ডে ৩ জুলাই চূড়ান্ত চার্জ গঠনের কথা রয়েছে। ঠিক তার আগেই এক ইসিএল আধিকারিক-সহ তিন কয়লা কারবারিকে গ্রেফতার করেছে তারা। মঙ্গলবার কলকাতার নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছিল ইসিএলের প্রাক্তন জিএম অমিতকুমার ধর এবং দুই কয়লা কারবারি শ্রীমন্ত ঠাকুর এবং বিদ্যাসাগর দাসকে। অবৈধ কয়লা কারবারে যুক্ত লালার সিন্ডিকেটে মদত দেওয়া এবং সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। বুধবার ধৃতদের আনা হয় আসানসোল সিবিআই বিশেষ আদালতে। সিবিআই তাঁদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। বিচারকের কাছে সেই আবেদন করা হয়েছে।
তার আগে গত ২১ জুন ইসিএলের জিএম নরেশকুমার সাহা এবং কয়লা কারবারি অশ্বিনীকুমার যাদবকে গ্রেফতার করে সিবিআই। চার দিন সিবিআই হেফাজতে থাকার পরে তাঁদের আবার দশ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩ জুলাই চার্জশিটে নাম থাকা মোট ৪৩ জনের মধ্যে ৪২ জনকেই হাজির করাতে হবে আদালতে। ওই চার্জশিটে থাকা ৪৩ জনের মধ্যে শুধু বিনয় মিশ্র এখনও ফেরার। উল্লেখ্য, এক আইনজীবীর মৃত্যুর কারণে সহকর্মী আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত থাকলেও বিচার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেননি। অভিযুক্তেরা নিজেরা লিখিত ‘সাবমিশন’ দিয়েছেন।