কলকাতা যাওয়ার পথে শক্তিগড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল। রবিবার সন্ধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা যাওয়ার পথে শক্তিগড়ে দাঁড়াল গাড়ি। ল্যাংচাহাবেও গেলেন অনুব্রত মণ্ডল। কিন্তু সংযম দেখিয়ে ল্যাংচা খেলেন না কেষ্ট। বরং শশা-মুড়ি আর চা দিয়েই সন্ধ্যাহার সারলেন তিনি। কিছু ক্ষণ বিরতি নিয়ে গাড়ি ফের ছুটল কলকাতার দিকে। তিহাড়-মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পাঁচ দিন পরেই চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যাচ্ছেন অনুব্রত। গুঞ্জন ছিল যে, জামিনের পর প্রথম বার কলকাতায় গিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। রবিবার সন্ধ্যায় শক্তিগড়ে দাঁড়িয়ে অবশ্য অনুব্রত সেই জল্পনায় জল ঢালেন।
শক্তিগড়়ে চেনা মেজাজেই দেখা গিয়েছে অনুব্রতকে। তিনি জানান, তাঁর বাড়িতে দুর্গাপুজো হবে। তাই এ বার কলকাতায় চিকিৎসা করিয়েই বীরভূমে ফিরবেন তিনি। উৎসবের মরসুম শেষ হলে দেখা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেও অনুব্রত বলেন, “মানুষের পাশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন। সব ঠিক হয়ে যাবে। সবাই ভাল থাকুন।” সকলকে পুজোর শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর সংযোজন, “ভাল করে দুর্গাপুজো কাটান। এখন পর পর উৎসব আছে। দুর্গাপুজোর পর লক্ষ্মীপুজো হবে। তার পর কালীপুজোও আছে। আছে ছট আর জগদ্ধাত্রী পুজো।”
দু’বছর পরে বীরভূমে ফিরেছেন কেষ্ট। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁর কী ভূমিকা হবে, কেষ্ট আগের মতোই সংগঠনের রাশ নিজের হাতে রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দলের অন্দরেই নানা মত রয়েছে। রবিবার অবশ্য অনুব্রত স্মরণ করিয়ে দেন যে, বীরভূম জেলার পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমানেরও কিছু এলাকার সংগঠন দেখার দায়িত্বে আছেন। প্রসঙ্গত, গ্রেফতার হওয়ার আগে বীরভূম জেলার পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমানের তিনটি বিধানসভা আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট এবং কেতুগ্রামের দলীয় সংগঠন দেখতেন অনুব্রত। কিন্তু অনুব্রতের জেলযাত্রার পর এই তিনটি বিধানসভার সংগঠন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। অনুব্রতহীন পূর্ব বর্ধমানে গত পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনে ভালই ফল করে তৃণমূল।
অনুব্রত এখনও বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি থাকলেও জেলার সংগঠন পরিচালনার জন্য একটি কোর কমিটি গড়ে দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। কোর কমিটি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অবশ্য বেশ সাবধানি ছিলেন কেষ্ট। তিনি বলেন, “আগেও ছিল কোর কমিটি। তখনও আমি জেলা সভাপতি ছিলাম। এখনও আমি জেলা সভাপতি। কোর কমিটি আছে।” তবে শনিবার বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের সঙ্গে কী বিষয়ে তাঁর আলোচনা হয়েছে, তা জানাতে অস্বীকার করেন অনুব্রত। বলেন, “দলের মিটিংয়ে কী আলোচনা হয়েছে, তা বাইরে কেন বলব?”
প্রায় আধ ঘণ্টা শক্তিগড়ে দাঁড়িয়ে ছিল অনুব্রতের গাড়ি। পুলিশের পাইলট কারের পাশাপাশি আরও দুটি গাড়ি ছিল কেষ্ট মণ্ডলের সঙ্গে। গাড়ির চালকের বাঁ দিকে বসেছিলেন অনুব্রত। আর কন্যা সুকন্যা ছিলেন পিছনের আসনে। রবিবার দুপুরে বাড়ির কাছে শক্তিপীঠ কঙ্কালীতলায় পুজো দিতে যান অনুব্রত। সেখানেও সঙ্গে ছিলেন মেয়ে। তার পর সড়কপথে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তিনি।