অনুব্রত মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।
দলনেত্রীর মুখে ‘বীরের মতো সম্মান’ দেওয়ার কথা শুনে তিনি যে বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছেন, তা শুক্রবার তাঁর হাবভাবেই বুঝিয়ে দিলেন গরু পাচার-কাণ্ডে ধৃত বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। শুক্রবার সকালে আসানসোল সংশোধনাগার থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পথে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় আবারও সেই ‘আগের অনুব্রত’-কে দেখা গেল। রীতিমতো খোশমেজাজে পাওয়া গেল কেষ্টকে। আত্মবিশ্বাসের সুরে তৃণমূল নেতা বললেন, ‘‘নিশ্চয়ই ছাড়া পাব।’’
মঙ্গলকোট বিস্ফোরণ মামলায় বিধাননগরে এমপি-এমএলএ আদালতে পেশ করার জন্য সাতসকালে আসানসোল সংশোধনাগার থেকে কলকাতায় আনা হচ্ছে অনুব্রতকে। জেল থেকে বেরোনোর পর গাড়িতে ওঠার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণের মুখোমুখি হন তৃণমূল নেতা। বৃহস্পতিবারই নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের বিশেষ সমাবেশে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী আবারও কেষ্টর পাশে থাকার বার্তা দিয়ে বলেন, ‘‘বীরের সম্মান দিয়ে ওকে (অনুব্রত) জেল থেকে বার করে আনবেন।’’ মমতার সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শুক্রবার অনুব্রতকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। সেই প্রশ্ন শুনে তৃণমূলের দাপুটে নেতা বলেন, ‘‘জেলে কন্টিনিউ কেউ থাকে না, ছাড়া পায়। নিশ্চয়ই ছাড়া পাব, ছাড়া পেলে যাব। এ আর বলার কী আছে।’’
প্রসঙ্গত, গরু পাচার-কাণ্ডে গ্রেফতারের পর মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন অনুব্রত। তাঁর সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ চেহারা কার্যত ফিকে দেখাচ্ছিল। কিন্তু দলনেত্রী যে ভাবে প্রথম থেকে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন, তার পরই খানিকটা খোশমেজাজে পাওয়া গিয়েছে কেষ্টকে। শুক্রবার সকালে যখন গাড়িতে উঠে বসছেন অনুব্রত, তখন সংবাদমাধ্যমের বুম গাড়ির জানলার মধ্যে রাখায়, রীতিমতো ধমকের সুরে বলেছেন, ‘‘ওটা ভিতরে রাখবেন না’’। নেত্রীর বার্তা পাওয়ার পর অনুব্রতের শরীরী ভাষা (বডি ল্যাঙ্গোয়েজ) এই বদল বলে মনে করছেন অনেকে।
অনুব্রতের গ্রেফতারের পর প্রথমে মুখ না খুললেও পরে বেহালায় তৃণমূলের মঞ্চ থেকে তাঁর পাশে থাকার বার্তা দেন মমতা। অনুব্রতকে কেন গ্রেফতার করা হল, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এও বলেছিলেন, ‘‘একটা কেষ্টকে আটকে রাখলে, লক্ষ কেষ্ট আসবে। কেষ্টরা এজেন্সিকে ভয় পাবে না।’’ মমতার সেই বার্তার পর অনেকটাই আত্মবিশ্বাস ফেরে অনুব্রতের। সেই মন্তব্যের পর আবারও বৃহস্পতিবার যে ভাবে কেষ্টকে ‘বীরের সম্মান দেওয়া’র কথা বলে পাশে থাকার ব্যাপারে আশ্বাস দিলেন তৃণমূলনেত্রী, তাতে অনেকটাই যে, আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন জেলবন্দি অনুব্রত, তা তাঁর শুক্রবারের শরীরী ভাষাই বুঝিয়ে দিয়েছে।