—প্রতীকী চিত্র।
ইসিএলের অধীনে থাকা ১৪টি এরিয়ার ১০৩টি স্কুলে ৪০৩ জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে ইসিএলের খাতায় ৫২টি স্কুল বন্ধ হলেও, শিক্ষকেরা নিজেদের উদ্যোগে সেগুলি চালু রেখেছেন বলে দাবি। তবে, এই বন্ধ ও চালু স্কুলগুলির শিক্ষকেরা গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বেতন পাননি বলে অভিযোগ ‘কয়লা খাদান শিক্ষক মোর্চা’ নামে একটি সংগঠনের। বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ইসিএলের এইচওডি (ওয়েলফেয়ার) মঞ্জুল আলম।
ওই সংগঠনটির সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশির ভাগ স্কুলগুলিতেই প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হয়। কয়েকটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এবং পাঁচটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হয়। এর মধ্যে খাতায়-কলমে ৫২টি স্কুল বন্ধ। তবে শিক্ষকেরা সেগুলিও নিজেদের উদ্যোগে চালু রেখেছেন বলে দাবি।
২০১৭-য় একটি সরকারি এজেন্সি সমীক্ষা করে ৪৪টি স্কুলের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং যে সব স্কুলে কম পড়ুয়া রয়েছে, সেই স্কুলকে নিকটবর্তী স্কুলের সঙ্গে সংযুক্তিকরণ ও শিক্ষকদের রাজ্য সরকার নির্ধারিত বেতন দেওয়ার সুপারিশ করে কোল ইন্ডিয়ার কাছে। কিন্তু ইসিএল সে সময় ৩৩টি এবং ২০২৩-এ ১৯টি স্কুল বন্ধ করে দেয়।
ওই শিক্ষক সংগঠনটির সম্পাদক সঞ্জয়কুমার চৌধুরী জানান, স্নাতক স্তরের শিক্ষকদের মাসে সাড়ে পাঁচ হাজার, বিএড স্তরের শিক্ষকদের সাত হাজার এবং অনূর্ধ্ব স্নাতক স্তরের শিক্ষকদের পাঁচ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২২-এর এপ্রিল থেকে কেউই বেতন পাননি। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক শিবকান্ত পাণ্ডে জানান, গত ১২ জুন গ্রীষ্মের ছুটি শেষ হওয়ার পরে তাঁরা লাগাতার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ১৯৮৫-তে তৃতীয় জাতীয় কয়লা বেতন চুক্তিতে কোল ইন্ডিয়ায় কর্মরত শিক্ষকদের করণিকের মর্যাদা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত সে নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি বলেই সংশ্লিষ্ট সংগঠনটির অভিযোগ।
এ দিকে, ইসিএলের বন্ধ করা স্কুলগুলির মধ্যে রয়েছে ঝাড়খণ্ডের মোগমা ওয়ার্কশপ এলাকার স্বামী বিবেকানন্দ অ্যাকাডেমি, পশ্চিমবঙ্গের কেন্দা এরিয়ার ছোড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। দু’টি স্কুলই শিক্ষকেরা নিজ উদ্যোগে চালু রেখেছেন বলে দাবি। ওই দু’টি স্কুলের শিক্ষক যথাক্রমে কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় ও শ্যামলাল জসোরিয়া সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে জানিয়েছেন, ২০১৬-য় ১৬টি স্কুলের ৪২ জন শিক্ষক কলকাতা হাই কোর্টে ইসিএলে কর্মরত শিক্ষকদের ন্যায্য বেতন এবং অন্য পরিষেবা প্রদানের দাবিতে মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁদের আবেদন ছিল, স্কুল বন্ধ করা হলেও শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করা যাবে না। প্রয়োজনে একটি স্কুলকে অন্য স্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত করা যেতে পারে। বর্তমানে মামলাটি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে বিচারাধীন। আদালতের নির্দেশে ইতিমধ্যেই ইসিএল আদালতের কাছে ছ’লক্ষ টাকা জমা দিয়েছে।
এখন সমস্যা কবে মিটবে, সে দিকেই তাকিয়ে শিক্ষকেরা। খাস কাজোড়ার একটি স্কুলে কর্মরত বাসকীনাথ শর্মা জানান, তাঁদের অনেকেই গৃহশিক্ষকতা করে বা বাড়ির অন্য কারও উপর নির্ভর করে সংসার চালাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসিএলের এক আধিকারিক জানান, বেতন ও অন্য বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে।