আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। ফাইল চিত্র।
প্রয়োজনে, রুগ্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ খারাপ নয়। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানা পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুরের ইস্কো থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এমনই মন্তব্য করলেন আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। অগ্নিমিত্রার এই মন্তব্যের পরেই সরব হয়েছে সিপিএম ও তৃণমূল। যদিও বিজেপি প্রার্থীর দাবি, রুগ্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শ্রমিক কল্যাণের জন্যই জরুরি দাওয়াই হতে পারে বেসরকারিকরণ।
বৃহস্পতিবার ইস্কোর শ্রমিকদের মধ্যে ভোট প্রচারের জন্য স্কব গেটে গিয়েছিলেন অগ্নিমিত্রা। প্রায় দু’ঘণ্টা সেখানে ছিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি তৃণমূল ও সিপিএম নানা জায়গায় প্রচার চালাচ্ছে, কেন্দ্র ইস্কো, রেল, ইসিএলের বহু খনির বেসরকারিকরণের তোড়জোড় করছে। এ দিন সে প্রসঙ্গ উঠতেই অগ্নিমিত্রা বলেন, “শ্রমিক কল্যাণের লক্ষ্যে রুগ্ণ হয়ে পড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ হলে, তা ভালই। এর ফলে যদি শ্রমিকদের ভাল হয়, তাতে অসুবিধা কোথায়? যদি কেন্দ্রীয় সরকার মনে করে বেসরকারিকরণ হওয়া উচিত, তবে হোক। এতে খারাপের কিছু নেই।”
ঘটনাচক্রে, অগ্নিমিত্রা এমন একটি লোকসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে এ কথা বলছেন, যেখানে ইস্কো, চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসের (সিএলডব্লিউ) মতো রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা রয়েছে। রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএলের অন্তত ৬০টি খনি। এলাকার বহু মানুষ যুক্ত ভারতীয় রেলের সঙ্গেও। সেখানে এমন মন্তব্য আদতে ভোটারদের মধ্যে আশঙ্কার পরিবেশ তৈরি করবে কি না, তা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব দৃষ্টান্ত হিসাবে হিন্দুস্তান কেব্লস এবং বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বন্ধ হওয়ার কথা তুলছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, ‘অলাভজনক’ এই কারখানা দু’টি ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে বন্ধ হয়। কিন্তু দলের ভোটপ্রাপ্তিতে দেখা যায়, এর কোনও প্রভাব পড়েনি। অর্থাৎ, বৃহত্তর সংখ্যক মানুষ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেননি, অন্তত ভোট-বাক্সতা-ই বলছে।
যদিও, বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সিপিএম এবং তৃণমূল। সিপিএম নেতা তথা সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, “অত্যন্ত বিপজ্জনক কথা। বিজেপি ভোটে জিতলে, আমাদের আশঙ্কা সত্যি করে ইস্কো, খনি, সবই না বেসরকারি পুঁজির হাতে বেচে দেয়।”
তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক তথা আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটকের প্রতিক্রিয়া: “কেন্দ্র যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করার পরিকল্পনা করছে, এটা আমরা আগেই বলেছি। ওঁদের প্রার্থীর কথাতেই এখন বিষয়টি স্পষ্ট হল।” যদিও বিষয়টিকে এ ভাবে দেখতেই রাজি নন বিজেপির জেলা সভাপতি দিলীপ দে। তিনি জানাচ্ছেন, তাঁরা কখনই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিপক্ষে নন। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ধুঁকতে থাকলে, সেটির পুনরুজ্জীবনের জন্য যদি বেসরকারি লগ্নি আসে, তা হলে সেটাও স্বাগত। তাঁদের প্রার্থী এটাই বলতে চেয়েছেন বলে মত দিলীপের। তবে বিজেপির থেকে শিল্প-নীতির প্রশ্নে দৃশ্যত কিছুটা ভিন্ন অবস্থান সঙ্ঘ পরিবারের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-এর। সংগঠনের জেলা সহ-সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “আমরা সব বিধায়ক এবং সাংসদদের কাছে বেসরকারিকরণের বিরোধিতা করার জন্যই আবেদন জানাই।”