চালে পোকা। নিজস্ব চিত্র
মিড-ডে মিলের চালের বস্তা খুলতেই কিলবিল করছে কালো পোকা। বেশির ভাগ চালই পচে, গুঁড়ো হয়ে মিশে গিয়েছে পোকার সঙ্গে। কেতুগ্রামের একটি স্কুলের ছাত্রদের একাংশের দাবি, এই চালেরই ভাত খেতে হয় তাদের। যদিও অভিযোগ মানেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, যে চালে পোকা ধরেছে, তা বাতিল করা হয়েছে।
নানা দুর্নীতির অভিযোগে দিন পাঁচেক আগেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে গোলমাল বেধেছিল অভিভাবকদের একাংশের। তার তদন্তে বুধবার প্রশাসনের আধিকারিকেরা স্কুল পরিদর্শনে গেলে তাঁদের ঘিরে চলে বিক্ষোভ।
ছাত্রদের অভিযোগ, ৫০০ গ্রাম ডাল দিয়ে ছ’শো পড়ুয়ার মিড-ডে মিল রান্না হয়। চাল যেমন নোংরা, তেমনই খাবার জায়গাও আবর্জনার পাশে। প্রায়ই পেটের রোগে কাবু হয়ে পড়ে অনেকে। এক রাঁধুনির দাবি, ‘‘অল্প ও নোংরা কাঁচামাল দেওয়া হয় মিল রান্না করার জন্য।’’
এ দিন স্কুল পরিদর্শনে যান এসআই কুন্তল দত্ত, এআই শেখর মণ্ডল ও কেতুগ্রাম ২-এর যুগ্ম বিডিও শওকত আলি। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের স্কুলের ভাঙাচোরা ভবন, পোকা ধরা চাল, অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা কম্পিউটার দেখান। তাঁদের দাবি, ‘‘নিয়মিত ক্লাস হয় না। প্রতিবাদ করতে গেলে ছেলেমেয়েদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়।’’ পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, ‘‘স্কুলের জলের ট্যাঙ্ক খোলা। তাই নোংরা জল খেতে হয়।’’
স্কুল সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার দুপুরে অভিভাবকদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের বচসা বাধে। ওই দিনই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে স্মারকলিপি জমা দেন অভিভাবকেরা।
সুদীপ কুণ্ডু, রামমোহন দে, রেজাউল হকদের মতো অভিভাবকদের অভিযোগ, ‘‘ক্লাসঘরে জঞ্জাল জমে থাকে। স্কুলের ভবন ভগ্নপ্রায়। একাদশ শ্রেণির ছাত্রদের ঘরের ছাদ ভেঙে শিক বেরিয়ে এসেছে।’’ এ ছাড়া, একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা, স্কুলের মাঠ সংস্কার, গ্রন্থাগার পুনর্নির্মাণের দাবি জানান তাঁরা। স্কুলের নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল বলেও তাঁদের অভিযোগ।
স্কুল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, পোকা ধরা চাল আগেই বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু তা স্কুলে জমিয়ে রাখা কেন, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। কোনও অভিযোগই মানেননি প্রধান শিক্ষক তরুণ সাধু। তবে তিনি বলেন, ‘‘অভিভাবকদের দাবিগুলি শোনা হয়েছে। যে সব দাবি সঙ্গত, সেগুলি মেনে নেওয়া হবে।’’ স্কুল পরিদর্শক কুন্তল দত্ত এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। মিড-ডে মিলে পচা চাল ব্যবহারের অভিযোগ-সহ অন্য অভিযোগগুলো খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা স্কুল পরিদর্শক শ্রীধর প্রামাণিক।