রাবণ-রূপী সুনীল-সহ বিজেপি নেতাদের ছবি নিয়ে বিক্ষোভ তৃণমূলের। নিজস্ব চিত্র।
সাংসদ সুনীল মণ্ডল ফের তৃণমূলে ফিরবেন, এমন জল্পনা তৈরি হতেই পূর্ব বর্ধমানে দলের অন্দরে জোরাল হচ্ছে ক্ষোভ। সুনীলকে ফেরানোর বিরোধিতা করে বর্ধমান পূর্ব লোকসভার তৃণমূল কর্মীদের একাংশ এ বার প্রকাশ্য প্রতিবাদে নেমেছেন। পোস্টার-ফ্লেক্সে ঘটেছে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। সেখানে সুনীল-সহ বিজেপি-র কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতাদের রাবণের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ফ্লেক্সের সেই ‘রাবণ’-এর ১০টি মাথার মধ্যমণি অবশ্য সুনীলই। অন্যগুলিতে রয়েছেন, নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, জে পি নড্ডা, যোগী আদিত্যনাথ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী, অর্জুন সিংহ, সায়ন্তন বসুরা। সুনীলকে ‘বাংলা ও বাঙালির শত্রু’ বলেও চিহ্নিত করা হয়েছে ওই ফ্লেক্সে। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর বিধানসভার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গিয়েছে এমন ফ্লেক্স।
শুক্রবার বিকেলে এমনই ফ্লেক্স নিয়ে শুড়েকালনা বাজার এলাকায় জমায়েত হয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। শাসক দলের কর্মীরা। সুনীল-সহ ১০ বিজেপি নেতার মুখের ছবি দেওয়া সেই ফ্লেক্সের উপরে লেখা ‘কৃষকের শত্রু, অম্বানী-আদানির কাছে দেশ বিক্রির ষড়যন্ত্রকারী’। আর সুনীলকে রাবণ বলে চিহ্নিত করা ছবির নীচে লেখা, ‘রাজনীতির ব্যাপারী, নীতি আদর্শহীন, গিরগিটি, গদ্দার সুনীল মণ্ডলের তৃণমূলে ঠাঁই নাই’। প্রসঙ্গত, বিজেপি-তে গিয়ে তিনি ভুল করেছিলেন বলে ইতিমধ্যেই কার্যত মেনে নিয়েছেন সুনীল। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না বিজেপি। সহ্য করতে পারছে না।’’ না।’’ গত ডিসেম্বরে বিজেপি-তে যোগ দিলেও তৃণমূলের টিকিটে লোকসভা ভোটে জেতা সুনীল এখনও সাংসদ পদে ইস্তফা দেননি।
শুড়েকালনার বাসিন্দা, জেলা তৃণমূলের সম্পাদক প্রদীপ পাল বলেন , ‘‘তৃণমূলের প্রতীকে ভোটে লড়ে জিতে সুনীল মণ্ডল সাংসদ হয়েছিলেন। অথচ বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে তিনি শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপি-তে যোগ দেন। তার পর থেকে তিনি কেন্দ্র ও রাজ্য বিজেপি নেতাদের নির্দেশ শিরোধার্য করে তৃণমূলের বিরোধিতা শুরু করেন। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের নেতাদের কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেন। এমনকি, ভোটের ফল প্রকাশের পর তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে বদলা হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন সুনীল। কিন্তু ভোটে বিজেপি-র ভরাডুবির পর এখন তিনি ভোলবদল করেছেন। তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু জেলার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা চান না যে বিশ্বাসঘাতক সুনীলকে ফের দলে নেওয়া হোক।’’
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে সুনীলকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে জামালপুর বিধানসভা বিজেপি-র আহ্বায়ক জিতেন ডকাল বলেন , “সুনীল মণ্ডল হলেন নীতি-আদর্শহীন এবং ক্ষমতার মধু খাওয়া রাজনীতিক। আগে বামফ্রন্ট থেকে তৃণমূলে গিয়েছিলেন। আবার বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় আসছে এমন হাওয়া উঠতেই উনি বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। বিজেপি জিততে না পারায় উনি তৃণমূলে ফের ভিড়ে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। সুনীলের মতো নেতা বিজেপি-তে থাকুন, সেটা আমরাও চাই না।’’