বর্ধমান হাসপাতালের সামনে উচ্ছেদ অভিযান। নিজস্ব চিত্র।
বছরের পর বছর ফুটপাথ দখল করে বসে থাকা বেশ কিছু অস্থায়ী দোকান গুঁড়িয়ে দিল যন্ত্র। তবে রাস্তার দু’দিকে রাজ্যের শাসক দলের এক শাখা সংগঠনের নামে থাকা তিনটি কার্যালয়ে হাত পড়েনি। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরে বর্ধমান শহর থেকে হকার উচ্ছেদে তৎপর হয়েছে বর্ধমান পুরসভা। কমিটি গঠন করে শহরের প্রতিটি রাস্তায় বেআইনি দখলদার সম্পর্কিত সমীক্ষা হয়েছে। রিপোর্ট পেশ করার পরে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে হকার উচ্ছেদে হাত দেয় পুরসভা। বৃহস্পতিবার বেলা ১টা নাগাদ বর্ধমান মেডিক্যাল চত্বর, রাজ কলেজের সামনের রাস্তা পরিষ্কার করা হবে বলে আগেই প্রচার চালিয়েছিল পুরসভা। দেওয়া হয়েছিল নোটিসও।
পূর্ব ঘোষণা মতো এ দিন বিশাল পুলিশ বাহিনী নার্স কোয়ার্টার মোড়ে মোতায়েন করা হয়। আসেন পুরপ্রধান পরেশ সরকার, মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) তীর্থঙ্কর বিশ্বাস, ডিএসপি (বর্ধমান সদর) অতনু ঘোষাল, পুর-প্রতিনিধি, আধিকারিক ও কর্মীরা। সেখান থেকে শ্যামলাল অভিমুখী রাস্তায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। পথের দু’ধারে ১৭টি দোকান ভেঙে দেয় পুরসভা। বাবুরবাগ চৌমাথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গোল্ডেন জুবিলি’ ভবনের কাছেও উচ্ছেদ অভিযান চলে। রাস্তার দু’দিকে ঝুলে থাকা দোকানের অংশ ভাঙা হয়।
রাজ কলেজের পাঁচিলের গায়ে থাকা দোকানে অবশ্য হাত পড়েনি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটকের ডান দিকে দাঁড়িয়ে থাকে অ্যাম্বুল্যান্স। সেখানে শাসক দলের শাখা সংগঠনের নামে থাকা অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের কার্যালয়ও অক্ষত থেকে যায়। ওই অফিসের গায়ে থাকা দু’টি অস্থায়ী দোকানেও হাত পড়েনি। তবে ফটকের বাঁ দিকে থাকা দোকান ভাঙা হয়। এর পরেই রাজ কলেজ ও হাসপাতালের সামনে থাকা শ্যামসায়র পাড় দখলমুক্ত করতে নামে পুরসভা। একের পর এক অস্থায়ী দোকান ভাঙা হয়। যদিও শ্যামসায়রের পাড়ে থাকা তৃণমূলের একটি শাখা সংগঠনের দু’টি অফিসের গায়ে আঁচড় পর্যন্ত পড়েনি।
পুরপ্রধান বলেন, “হাসপাতালে ঢুকতে গেলে যানজটে আটকে যেতেন রোগী ও তার পরিজনেরা। বিভিন্ন মহল থেকে রাস্তা পরিষ্কারের দাবি তোলা হয়। আশা করি, শুক্রবার থেকে রোগী ও তার পরিজনদের হাসপাতালে ঢোকার আগে গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। রাস্তা যাতে ফের দখল না হয়, তার জন্য শ্যামসায়রের পাড়ে ১ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।”
বিরোধীদের দাবি, এই উচ্ছেদের ফলে সাধারণ রোগীর পরিজনদের নানা অসুবিধা হবে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রসূতি ও শিশুদের পোশাক-সহ প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস পাওয়া যেত দোকানগুলিতে। কম টাকায় খাবারও মিলত। সে সব আর পাওয়া যাবে না। দোকানদারদের উচ্ছেদ করা হলেও, কেন রাজ্যের শাসক দলের অফিস বহাল তবিয়তে থেকে গেল, সে প্রশ্ন তুলে পুরপ্রধানের সামনে কয়েক জন অস্থায়ী দোকানদার ক্ষোভপ্রকাশ করেন। সংসার কী ভাবে চলবে, জানতে চান তাঁরা।
পুরপ্রধান বলেন, “শ্যামসায়রের পাড়ে থাকা কার্যালয়ও ভাঙা হবে। সেখানে থাকা জিনিসপত্র সরানোর জন্য আমাদের কাছে সময় চেয়েছেন কয়েক জন। সময় দেওয়া হয়েছে।” পুরসভা সূত্রের খবর, রাজ কলেজের পাঁচিলের গায়ে থাকা দোকানগুলিকে নোটিস দিয়ে নথি নিয়ে পুরসভায় দেখা করতে বলা হয়েছে।