আসানসোলের দামাগড়িয়া খোলামুখ খনি। নিজস্ব চিত্র
কয়লা শিল্পে বিদেশি লগ্নির শর্ত শিথিলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হল নানা শ্রমিক সংগঠন। সিটু, আইএনটিইউসি থেকে বিএমএস, সুর চড়িয়েছে বিভিন্ন সংগঠনই। জোরদার প্রতিবাদের জন্য যৌথ আন্দোলনের প্রস্তুতিও শুরু করা হয়েছে বলে দাবি নেতাদের। বৃহস্পতিবার থেকে এ ব্যাপারে শ্রমিক-কর্মীদের মধ্যে প্রচার শুরু হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা একাধিক ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের শর্ত শিথিল করার কথা জানিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা খনিতে বিদেশি বিনিয়োগ। কয়লা খননের পাশাপাশি কয়লার প্রক্রিয়াকরণের কারখানা, কয়লা বিক্রি, কয়লা ভাঙা ও অন্য কাজে সরাসরি ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পশ্চিম বর্ধমানের খনি অঞ্চলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এর প্রতিবাদে সরব হন ইসিএলের নানা কোলিয়ারির শ্রমিক নেতারা।
সংস্থার পাঁচটি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে তৈরি ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র আহ্বায়ক তথা প্রাক্তন সিপিআই সাংসদ রামচন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত শোনার পরেই আমরা তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে থমিক আলোচনা করেছি। শীঘ্রই আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি হবে।’’ তাঁর দাবি, ইসিএলের খনিগুলিতে যখনই শ্রমিকদের উপরে আঘাত এসেছে তখনই তাঁদের কমিটি তীব্র প্রতিবাদ করেছে। এ ক্ষেত্রেও যৌথ আন্দোলন হবে।
সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘খনির শ্রমিক-কর্মীদের উপরে বারবার কেন্দ্রের তরফে বঞ্চনা হচ্ছে। ইসিএলের ১৬টি খনি আগেই বন্ধের ঘোষণা করেছে কয়লা মন্ত্রক। এ বার খনিতে বিদেশি পুঁজির অনুপ্রবেশের সিদ্ধান্ত হয়েছ, যার অর্থ খনি বেসরকারিকরণের রাস্তা পাকা করা।’’ তাঁর দাবি, বৃহস্পতিবারই জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বরে শ্রমিকদের মধ্যে এই সিদ্ধান্তের কুফলের বিষয়ে প্রচার করছে সিটু। আইএনটিইউসি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক চণ্ডী বন্দোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ১৯৭২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী খনি রাষ্ট্রায়ত্তকরণ করে শ্রমিক-সুরক্ষা নিশ্চিত করেছিলেন। এখন কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত তাতে বিঘ্ন ঘটবে।
খনিতে বিদেশি লগ্নি সংক্রান্ত ঘোষণার পরেই টানা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানায় আরএসএস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-ও। সংগঠনের ইসিএল ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক বিনোদ সিংহ জানান, ২-৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইসিএলের ১৪টি এরিয়ার প্রত্যেক খনিতে বিক্ষোভ-আন্দোলন হবে। তাঁর কথায়, ‘‘বুধবার রাতেই বিএমএসের কেন্দ্রীয় নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত আমরা মানব না। জোরকদমে বিরোধিতা করব।’’ তাঁর আরও দাবি, সর্বস্তরের শ্রমিক-কর্মীদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় জনজাগরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আইএনটিটিইউসি-র খনি শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক হরেরাম সিংহ জানান, তাঁরাও বৃহস্পতিবার থেকেই বিরোধিতা শুরু করেছেন। দু’এক দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডেকে পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করা হবে।