কালনার বৃদ্ধপাড়া মোড়ের কাছে গোলমাল। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
আবারও বিক্ষোভ হল বিজেপির জেলা সভাপতি (কাটোয়া) কৃষ্ণ ঘোষের বিরুদ্ধে। শুক্রবার কাটোয়ার ইঁদারাপাড়ে দলের এক অনুষ্ঠানে কালো পতাকা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। তার রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার কালনার বৃদ্ধপাড়া মোড়ে দলের রাজ্য সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই জেলা সভাপতি ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ দাবি করে ক্ষোভ জানান বিজেপির কিছু কর্মী। যদিও জেলা সভাপতি কৃষ্ণবাবুর দাবি, যাঁরা বিক্ষোভ করেছেন, তাঁরা দলের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি তৃণমূলের চক্রান্ত বলেও তাঁর দাবি।
এ দিন পূর্বস্থলীর নাদনঘাট, কালনার বেগপুর-সহ কয়েকটি জায়গায় বিজেপির তরফে ‘গৃহসম্পর্ক অভিযান’ কর্মসূচি নেওয়া হয়। এই কর্মসূচিতে আসেন দলের রাজ্য সহ-সভাপতি প্রতাপবাবু। তিনি কৃষ্ণবাবুকে নিয়ে পূর্বস্থলী, কালনার নানা গ্রামে যান। বিজেপি সূত্রের দাবি, প্রতাপবাবুর আসার খবর পেয়েই কালনার কল্যাণপুর, বাদলা, পিণ্ডিরা, পূর্ব সাতগাছিয়া এলাকার বেশ কিছু নেতা-কর্মী দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কালনা ১ ব্লকের বৃদ্ধপাড়া গ্রামের মোড়ে জড়ো হন। তাঁদের হাতে দলের পতাকা ছাড়াও ছিল কালো পতাকাও কৃষ্ণবাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির স্লোগান লেখা ফেস্টুন। গ্রামের মোড়ে প্রতাপবাবু ও কৃষ্ণবাবুর গাড়ি ঢুকতেই বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, লোকসভা ভোটে ২৬ লক্ষ টাকা এবং অমিত শাহের কর্মসূচির জন্য ৩ লক্ষ টাকার হিসাব দেননি জেলা সভাপতি। এ ছাড়াও তিনি আমপানের জন্য দলের তরফে পাঠানো ত্রাণের টাকা ও চালের হিসাব দেননি। কালনা ২ ব্লকে বিজেপি নেতা হিসেবে পরিচিত পলাশ মল্লিকের অভিযোগ, ‘‘মণ্ডল সভাপতি নির্বাচনে টাকার বিনিময়ে পদ পাইয়ে দিয়েছেন কৃষ্ণবাবু। ২০ নম্বর জেডপি মণ্ডলে যাঁকে সভাপতি করা হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ রয়েছে।’’ আর এক বিক্ষোভকারী আনন্দ তালুকদারের অভিযোগ, ‘‘জেলা সভাপতি পুরনো কর্মীদের মর্যাদা দেননি। তাঁর কাজকর্মে আখেরে তৃণমূলের লাভ হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে মানুষের অভিযোগ আছে, তাঁদের সংগঠনিক পদ না দেওয়ার জন্য বারবার আবেদন করা হলেও তিনি কানে তোলেননি।’’ বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বের নজরে আনতেই তাঁরা বিক্ষোভ-কর্মসূচি নিয়েছেন বলে দাবি করেন।
এ দিন বিক্ষোভ সামাল দিতে গাড়ি থেকে নেমে আসতে হয় প্রতাপবাবুকে। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান কৃষ্ণবাবুর কিছু অনুগামীও। দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয় বলে অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে কৃষ্ণবাবু দাবি করেন, ‘‘যাঁদের আজ বিক্ষোভে দেখা গিয়েছে তাঁরা বিজেপির লোক নন। বিজেপিকে হেয় করার জন্য শাসক দলই ষড়যন্ত্র করে এমনা ঘটিয়েছে। তাই বিষয়টির কোনও গুরুত্ব নেই।’’ প্রতাপবাবু অবশ্য জানান, ক্ষোভ থাকতেই পারে। তবে দলে তা জানানোর পদ্ধতি রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা দলের কোনও পর্যায়ের নেতা-কর্মী যদি হয়ে থাকলে শৃঙ্খলা ভেঙেছেন। ওঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর দেবু টুডুর পাল্টা প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ যাঁরা এনেছেন, তাঁরা আমাদের কেউ না। ওঁদের নিজেদের মধ্যে টাকার ভাগ নিয়ে গণ্ডগোল। বিজেপিতে যে কোনও শৃঙ্খলা নেই, এ সব ঘটনা তার প্রমাণ।’’