‘বালির ট্রাকের বলি হলাম আমরা’

খুব খুশি হয়ে ঘুমোতে গিয়েছিল ১০ বছরের মেয়েটা। বিশ্বাস করতে পারছি না, আর কোনও দিন আমার কাছে কোনও আব্দার করবে না। 

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০২:০৬
Share:

মৃত সুচিত্রা মালিকের ছেলে শ্রীকান্ত মালিক।

ভাগ্নিটার ইচ্ছে ছিল, বছরের প্রথম দিন পিকনিক করবে। আমি বলছিলাম, আলাদা করে কোথাও যেতে হবে না। বাড়িতেই মাংস নিয়ে আসব। সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া হবে। খুব খুশি হয়ে ঘুমোতে গিয়েছিল ১০ বছরের মেয়েটা। বিশ্বাস করতে পারছি না, আর কোনও দিন আমার কাছে কোনও আব্দার করবে না।

Advertisement

রাত তখন প্রায় দেড়টা। শীতের রাতে কম্বলমুড়ি দিয়ে বাইরে বাঁশের মাচায় শুয়েছিলাম। একটা ঘরে শুয়েছিল মা। আর একটা ঘরে দিদি, জামাইদাদা, ছেলেমেয়েদের নিয়ে শুয়েছিল। আচমকা মনে হল, কেউ যেন ধাক্কা দিয়ে মাচা থেকে ঠেলে বার করে দিল। কোমরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে চোখ খুলতে খুলতে মনে হচ্ছিল, স্বপ্ন দেখছি হয়তো। কিন্তু মুহূর্তেই বালিবোঝাই ট্রাকটা এসে আমাদের পুরো বাড়িটার উপরে পাল্টা খেয়ে পড়ল। নিজেকে বাঁচাব, না কি বাড়ির লোকেদের খুঁজব, নাকি পড়শিদের ডাকব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেমন ঘোর লেগে গিয়েছিল।

হুঁশ ফিরতেই চিৎকার শুরু করি। পাশের বাড়ি থেকে মামি ও অন্যরা ছুটে আসে। ওঁরাও চিৎকার করতে শুরু করে। তার পরে হাতে হাতে বালি সরাতে শুরু করি। কিন্তু মা, দিদি, ভাগ্নি, ভাগ্নেটা কাউকেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এক ট্রাক বালির মধ্যে সব কোথায় চাপা পড়ে গিয়েছিল। ভয় করছিল খুব। ওদের কোনও আওয়াজও পাচ্ছিলাম না। মনে হচ্ছিল, বেঁচে আছে তো!

Advertisement

তার মধ্যেই কারা যেন কোদাল, বেলচা নিয়ে এল। বালি সরাতে সরাতে একে একে সবাইকে দেখতে পেলাম। কিন্তু সব শেষ। এক দিনে ঘুমের মধ্যে সবাইকে হারিয়ে ফেললাম বিশ্বাস হচ্ছে না।

দিনমজুরি করে সংসার চালাই। তার মধ্যেই কিছু টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম। ভাগ্নিটার পিকনিকের আবদার শুনে ওই টাকা দিয়েই সব জোগাড়যন্ত্র করব ভেবেছিলাম। পাশের বাড়ির মামিকেও নিমন্ত্রণ করেছিলাম। বলেছিলাম, বছরের প্রথম দিনটা আমাদের বাড়িতেই খাওয়াদাওয়া কোরো। বালির ট্রাক সব শেষ করে দিল।

এমনিই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দামোদরের বাঁধে জীবন কাটাতে হয় আমাদের। ট্রাকগুলি এমন ভাবে চলাচল করে যে কোনও সময়েই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু বালির ট্রাকের বলি যে আমরাই হলাম, মানতে পারছি না।

(মৃত সুচিত্রা মালিকের ছেলে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement