ছবি: সংগৃহীত।
একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনা প্রকল্প খতিয়ে দেখতে রাজ্যে ঘুরে গিয়েছিল কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক দল (ন্যাশনাল লেভেল মনিটরিং কমিটি)। এ বার প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার কাজও খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি। কাল, শুক্রবার থেকে রাজ্যের ১৫টি জেলায় ওই কমিটির সদস্যেরা যাবেন বলে মঙ্গলবার চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রের একশো দিনের প্রকল্পের অধিকর্তা ধরমবীর ঝা। এই পরিদর্শনের মধ্যে রাজনৈতিক চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে রাজ্যেরশাসক দল।
গত জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় দলটি এ রাজ্যের ১৫টি জেলা পরিদর্শন করে (এ বারের তালিকায় সেগুলির মধ্যে ১২টি জেলা রয়েছে)। রাজ্যের পেশ করা খতিয়ান না মেলায় হুগলিকে দু’কোটি, পূর্ব বর্ধমানকে এক কোটির বেশি টাকা জরিমানা করা হয়। মালদহ ও দার্জিলিংকেও যথাক্রমে ২৬ ও ১৭ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। কেন্দ্রের পাঠানো চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাঁরা আর্থিক অনিয়ম যাচাই করার দাবিও তুলেছেন। সে কারণে একশো দিনের প্রকল্প ছাড়া, ওই দু’টির কাজও সরেজমিনে দেখবে পরিদর্শক দল।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, আলিপুরদুয়ার, ঝাড়গ্রাম ও কালিম্পং জেলায় কেন্দ্রের দলটি যাবে। প্রতি জেলায় তিন সদস্যের দলটি অন্তত দু’টি ব্লকের চার থেকে ছ’টি পঞ্চায়েতে ঘুরে প্রকল্পগুলির কাজটা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, নিয়ম মানা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছে কি না, সে সব দেখবে।
এমনিতেই একশো দিনের কাজের বরাদ্দ আটকে রাখা নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার নাম বদল নিয়েও কেন্দ্র প্রশ্ন তুলেছে। পাল্টা সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ দিন পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘কেন্দ্রের নিয়ম মেনে অডিট, জিয়ো-ট্যাগিং, নজরদারি, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার— সবই করা হয়েছে। দুর্নীতি বা অনিয়মের প্রশ্ন নেই। এখন মনে হওয়ার উপরে রিপোর্ট দিলে তো কিছু করার থাকে না।’’
২০১৯ সাল থেকে এ রাজ্যে কেন্দ্রের দল একশো দিনের কাজ পরিদর্শন করছে। হুগলি ও পূর্ব বর্ধমানের বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতকে সেই সময়ে টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে পঞ্চায়েতগুলি কী ভাবে টাকা ফেরত দিল, তা ফের খতিয়ে দেখতে আসে কেন্দ্রীয় দল। বিজেপির রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘড়ুইয়ের অভিযোগ, ‘‘একশো দিনের কাজের ‘মাস্টার রোল’ প্রভাবিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, গ্রামীণ সড়ক যোজনা নিয়ে সব জেলায় অভিযোগ অঢেল। আমরা কেন্দ্রের কাছে অনিয়মগুলি তুলে ধরেছিলাম। কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে তদন্তহওয়া উচিত।’’
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের যদিও দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের পুরস্কারের ক্ষেত্রে অর্ধেক বিষয়ে আমাদের রাজ্য প্রথম হয়। পঞ্চায়েত দফতরেরই ১৪টি পুরস্কার রাজ্য পেয়েছে। আমাদের রাজ্য সব বিষয়ে এগিয়ে রয়েছে। সে কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চক্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি।’’