TMC

আসানসোলে বড় ভাঙন বিজেপি-তে? তৃণমূলে যাচ্ছি, বললেন জেলা সম্পাদক

খনি শহরে বিজেপি-র একটি বড় অংশের রাজনৈতিক গতিবিধি ঘিরে জল্পনা জোরালো হচ্ছে। সেই সময়েই শহরের রবীন্দ্রভবনে তৃণমূল আয়োজন করেছে ‘যোগদান’ মেলার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২১ ২০:৩৯
Share:

প্রতীকী চিত্র।

খনি শহর আসানসোলে কি বিজেপি-র পায়ের তলার মাটি সরছে? সদ্য পেরিয়ে আসা বিধানসভা ভোটে শিল্প শহরে দলের গুরু দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া একাধিক নেতা এখন ‘বেসুরো’ বাজছেন। কেউ আবার আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘‘মন ভেঙে গিয়েছে।’’ সেই তালিকায় রয়েছেন বিজেপি-র আসানসোলের জেলা সম্পাদকের পদে থাকা মদনমোহন চৌবেও। সম্প্রতি আসানসোলে যে সব দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিজেপি-র দূরত্ব প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে তাঁদের গন্তব্য কোথায়? এই নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে ফোনে মদনমোহন বলেছেন, ‘‘আমরা তৃণমূলে যাচ্ছি।’’ মদনমোহন এ কথা বললেও তিনি কিন্তু শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজেপি জেলা সম্পাদকের পদ ছাড়েননি।

Advertisement

খনি শহরে গেরুয়াশিবিরের একটি বড় অংশের রাজনৈতিক গতিবিধি ঘিরে যখন আলোচনা তুঙ্গে, ঘটনাচক্রে ঠিক সেই সময়েই শহরের রবীন্দ্রভবনে তৃণমূল আয়োজন করেছে ‘যোগদান’ মেলার। যে মেলার মূল উদ্যোক্তা রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা মলয় ঘটক। আর তাতেই দুইয়ে দুইয়ে চার করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তৃণমূল সূত্রে খবর, রবিবারের ওই ‘মেলা’য় বিজেপি ছেড়ে জোড়াফুল শিবিরের পতাকা তুলে নিতে চলেছেন গেরুয়াশিবিরের প্রায় ৪০০ নেতা এবং কর্মী। তৃণমূল শিবিরের বিভিন্ন সূত্র বলছে, ২১ জুলাই ‘শহিদ দিবস’-এ শুধুমাত্র আসানসোল থেকেই সমাবেশে যোগ দিতে চলেছেন বিজেপি-র বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় ৬ হাজার সদস্য।

২০১১ সালে অর্থাৎ রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের সময় আসানসোল উত্তর কেন্দ্র থেকে বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছিলেন মদনমোহন। ২০১১ সালের নির্বাচনে তাঁকে হার মানতে হয়েছিল। তার ১০ বছর পর, ২০২১ সালেও দলের এক জন সদস্য হিসাবেও সেই একই অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছেন তিনি। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিপুর হারের মুখোমুখি হওয়ার দায় মদনমোহন ঠেলছেন দলের উচ্চপদস্থ নেতাদের ঘাড়ে। তাঁর মতে, ‘‘মনটা ভেঙে গিয়েছে। অনেক জায়গাতেই যাঁদের টিকিট দেওয়া হয়েছিল তাঁদের বদলে বিজেপি-র কোনও কর্মীকে টিকিট দিলে ভাল হত। শুধু এখানে নয়। সব জায়গায়। ভাবতে পারিনি নিজের দল তার আদর্শ থেকে সরে যাবে এবং দুর্নীতি করবে। দল করার আর মানসিকতা আর নেই। এই দুর্নীতিতে কারা জড়িত সে খবর আপনারা কিছু দিন বাদে পেয়ে যাবেন। বড়, ছোট সব নেতাই এর সঙ্গে জড়িত।’’

Advertisement

শুধু মদনমোহনই নন, আসানসোলের গেরুয়াশিবিরের একটি অংশ ইতিমধ্যেই দলত্যাগের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে বলে দাবি করছেন শিল্পশহরের তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকে। বিধানসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যের মতো আসানসোলেও বিপুল জয়ের আশা দেখেছিল বিজেপি। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পর পর দু’বার বিপুল ভোটে জয় সেই পদ্মশিবিরের সেই আশার অন্যতম কারণ ছিল। কিন্তু তাতে জল ঢেলে দিয়েছে বিপুল সংখ্যক আসন নিয়ে তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যের ক্ষমতায় তৃণমূলের ফিরে আসা। গেরুয়াশিবিরের একটি অংশই স্পষ্টই জানিয়ে দিচ্ছে, এ রাজ্যে বিজেপি-র লড়ার কৌশলে ভুল ছিল। প্রার্থিতালিকা নিয়ে অসন্তোষও চেপে রাখছেন না তাঁরা।

আসানসোলের বিজেপি নেতা লক্ষ্মণ ঘোড়ুই অবশ্য বুক ঠুকে দাবি করেছেন, ‘‘এই জেলায় বিজেপি-র একজন কার্যকর্তাও এখনও দল ছেড়ে যায়নি। আমার কাছে দল ছেড়ে দেওয়ার খবরও নেই। দীর্ঘ সন্ত্রাসের জেরে কিছু হতাশা তৈরি হয়েছে। আমার বিশ্বাস, কেউ দল ছাড়বে না। এটা তৃণমূল, সিপিএম বা কংগ্রেসের মতো ঠুনকো নয় যে কেউ চাপে বা ভয়ে দলত্যাগ করবে।’’

বিজেপি শিবিরে এমন ভাঙন দেখে স্বাভাবিক ভাবেই উল্লসিত তৃণমূল। দলের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলছেন, ‘‘আসানসোলের বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই বিজেপি এবং সিপিএমের বিভিন্ন পদাধিকারীর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি দলকে জানিয়েছি। নির্দেশ পেলেই তাঁরা দলে যোগ দেবেন। বিজেপি-তে কর্মীদের সুখ দুঃখের কথা শোনার কোনও নেতা নেই। তাই তো সকলে বিজেপি ছেড়ে চলে আসছে। নির্বাচনের পরে সবাই বিজেপি-র ক্ষমতা বুঝে গিয়েছে। তাই ওই দল ছেড়ে দিতে চাইছে।’’ সেই লগ্ন সমাগতপ্রায় বলেই তৃণমূলের একটি অংশের মত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement