ভোল বদলের পরে। নিজস্ব চিত্র।
রুমাল থেকে রাতারাতি বেড়াল।
পঞ্চায়েতের হোমিয়োপ্যাথি দাতব্য চিকিৎসালয় বলে পরিচিত ছিল ভবনটি। শুক্রবার থেকে রাতারাতি তৃণমূলের কার্যালয়ে বদলে গিয়েছে সেটি। উদ্বোধনের পরে সেই অফিসে বিধায়ক (বর্ধমান উত্তর) নিশীথ মালিক ও ব্লক সভাপতি (বর্ধমান ১) তথা বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান কাকলি তায়ের পাশাপাশি বসে থাকার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) অস্বস্তিতে পড়েছে দলও। ওই দুই নেতার দাবি, ভবনটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
বর্ধমান ১ ব্লকের রায়ান ১ পঞ্চায়েতের নেড়োদিঘিতে পঞ্চায়েতের পরিচালনায় দাতব্য চিকিৎসালয়টি চলত। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, গ্রামে ঢুকতেই পঞ্চায়েতের নিজস্ব ঘরে দাতব্য চিকিৎসালয়টি চলত। স্থানীয় বাসিন্দারা এক টাকা দিয়ে চিকিৎসা করার সুযোগ পেতেন সেখানে। কিন্তু কিছু যুবক ওই ভবনটি দখল করে আড্ডা দিতে শুরু করে। শুক্রবার সন্ধে নাগাদ ভবনের ভোল বদলে তৃণমূলের কার্যালয় হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা কমল শেখ, নাজিম মল্লিকদের প্রশ্ন, ‘‘সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করা শাসকদলের কর্তব্য ও দায়িত্ব। তাঁরাই কি না সরকারি ঘর দখল করে দলীয় কার্যালয় গড়ে তুলল!’’ ফের চিকিৎসালয় ফিরিয়ে আনারও দাবি তুলেছেন তাঁরা। মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) তীর্থঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘‘বুধবারই তদন্ত করতে পাঠানো হবে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে আসার পরেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে এক চিকিৎসকের মৃত্যুর পরে হোমিয়োপ্যাথি দাতব্য চিকিৎসালয় ভবনটিতে তালা পড়ে যায়। এলাকার কিছু যুবক আড্ডা দিতেন সেখানে। রায়ান ১ পঞ্চায়েতের সদস্য সফিউন্নেসা বেগম অভিযোগকারীদের চিঠিতে লিখে দিয়েছেন, ‘আবেদন সত্য’। পঞ্চায়েত প্রধান আলমগীর হাসান বলেন, ‘‘সরকারি জায়গা দখল করে রাজনৈতিক কার্যালয় বানানো যায় না। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’’
বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের কটাক্ষ, ‘‘কাটমানি নিয়ে হচ্ছিল না, এ বার তৃণমূলকে সরকারি ভবনকেও গ্রাস করতে হল! দাতব্য চিকিৎসালয় চালু না করে দলীয় কার্যালয় গড়ে তুলল তৃণমূল। এই ঘটনার চরম নিন্দা করছি।’’ ‘দখলদারির’ রাজনীতি প্রকাশ্যে চলে আসায় বিধায়ক ও ব্লক সভাপতি অস্বস্তির মধ্যে পড়েছেন। ব্লক সভাপতি বলেন, ‘‘এটা যাঁরা করেছে, অন্যায় করেছে। দলীয় অফিসকে আবার দাতব্য চিকিৎসালয়ে ফিরিয়ে দিতে বলা হয়েছে।’’ আর বিধায়ক বলেন, ‘‘দলীয় অফিস উদ্বোধন করতে যাইনি। উচ্চ বাতিস্তম্ভের আলোর উদ্বোধন করার পরে ওই ঘরে আমাদের বসানো হয়েছিল। বিষয়টি শুনেছি। ঠিক হয়নি।’’