কুমির ধরছেন বনকর্মীরা। অগ্রদ্বীপে। —নিজস্ব চিত্র।
মাসখানেক আগে কাটোয়ার ভাগীরথীতে ঘড়িয়াল দেখে কুমিরের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। বন দফতরের তরফে কুমির নিয়ে গুজব না ছড়ানোর জন্য মাইকে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু বুধবার সত্যিই কুমিরের দেখা মিলল কাটোয়ায়।
এ দিন সাতসকালে কাটোয়ার কালিকাপুর গ্রামে ভাগীরথীর পাড়ে কর্দমাক্ত কাশবনে ঢুকে পড়ে একটি পূর্ণবয়স্ক কুমির। প্রায় ১২ ফুট লম্বা কুমিরটিকে দেখে এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রচুর মানুষ ভাগীরথীর পাড়ে ভিড় জমান। খবর পেয়ে পুলিশ ও বন দফতরের কর্মীরা পৌঁছন। গ্রামবাসীর সহযোগিতা নিয়ে বনকর্মীরা কুমিরটিকে জলকাদায় ভরা কাশবন থেকে ধরেন। জাল ও দড়ি দিয়ে বেঁধে গাড়িতে তুলে সেটিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে যে ভাবে কুমিরটিকে জালে ধরে বাঁশের সাহায্যে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পশুপ্রেমীদের অনেকে। এর ফলে কুমিরটির স্বাস্থ্যের কোনও ক্ষতি হবে কি না, সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। কুমিরটি ধরা পড়ার পরে জালে বন্দি অবস্থায় সেটির সঙ্গে কয়েক জনের নিজস্বী তোলার ঘটনা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও বন দফতরের দাবি, কুমিরটিকে ও ভাবে জালে বন্দি করে বাঁশে করে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না। এর ফলে কুমিরটির স্বাস্থ্যের কোনও ক্ষতি হয়নি বলেও দাবি বন দফতরের।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েতের কালিকাপুর গ্রামে ভাগীরথীর ঘাট থেকে কিছুটা দূরে বাঁধের নীচে এ দিন সকালে কয়েক জন চাষি প্রথমে কুমিরটিকে দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে ঘাটের এক কর্মী ছুটে এসে কুমিরটি দেখে চিৎকার করতে থাকেন। খবর ছড়িয়ে পড়ায় প্রচুর লোকজন জড়ো হন। হট্টগোল দেখে কুমিরটি লোকালয়ের দিকে যেতে শুরু করে। সেখান থেকে কিছুটা দূরে থাকা একটি ইটভাটার কাছে ঝোপে ঢুকে পড়ে সেটি। পরে নদী লাগোয়া কাশবনে জলা জায়গায় ঘণ্টা চারেক লুকিয়ে থাকে। গ্রামবাসীর একাংশের সাহায্য নিয়ে বন দফতরের কর্মীরা বড় জাল, বাঁশ, দড়ি নিয়ে কুমির ধরতে কাশবনে ঢোকেন। প্রথমে কুমিরটির চোখ বড় চট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় কুমিরটিকে ধরা যায়।
দিন কয়েক আগে পূর্বস্থলী ও কালনার মাঝে এবং হুগলির বলাগড়ে ভাগীরথীতে কুমিরের দেখা মিলেছিল। ওই কুমিরটিই কি কাটোয়ায় চলে এসেছে? তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে বন দফতর জানায়। বনকর্মী কৌশিক মুখোপধ্যায় বলেন, “স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে বড় ওই কুমিরটিকে ধরতে আমাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। তবে কারও কোনও ক্ষতি হয়নি।’’
ঘাটের কর্মী তথা প্রত্যক্ষদর্শী অভিজিৎ হালদার বলেন, “এ দিন সকালে আমি ঘাটে বসেছিলাম। হঠাৎ দুই চাষি এসে কুমির দেখার কথা জানান। গিয়ে দেখি, বড় কুমিরটি বাঁধের নীচেই রয়েছে। লোকজন জড়ো হয়ে যাওয়ায় সেটি কাশবনে ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে অনেক কসরত করে কুমিরটিকে ধরা হয়েছে। কুমিরের বিকট চিৎকারে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল।’’
বন দফতরের কাটোয়া রেঞ্জের আধিকারিক শিবপ্রসাদ সিংহ বলেন, ‘‘ওই কুমিরটিকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। স্বাস্থ্যের কোনও ক্ষতি হয়নি। কোথা থেকে কুমিরটি এল, তা দেখা হচ্ছে। সেটিকে আমরা নিরাপদ জায়গায় রাখার
ব্যবস্থা করেছি।’’