বর্ধমানের তেজগঞ্জ মানায় তৈরি হয়েছে নতুন প্রকল্প। নিজস্ব চিত্র।
বর্ষার জলের উপরে নির্ভর করে বছরে এক বার মাত্র চাষ হতো এই সব এলাকায়। কোনও বছর বৃষ্টি না হলে মাথায় হাত পড়ত চাষিদের। এই সমস্যার সমাধানে বর্ধমানের আউশগ্রাম, গলসি, কাঁকসা, মঙ্গলকোটে নদী সেচ প্রকল্প তৈরি, সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর কাজ করছে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাকসিলারেটেড ডেভেলপমেন্ট অফ মাইনর ইরিগেশন প্রজেক্ট (ডবলিউবিএডিএমআইপি)। এই প্রকল্পের ফলে একফসলি জমি বহুফসলিতে রূপান্তরিত হতে পারে বলে আশা চাষিদের।
প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ জলসম্পদ তদন্ত ও উন্নয়ন দফতরের অধীনে এই প্রকল্পের কাজ চলছে। বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় জেলার বিভিন্ন ব্লকে এই প্রকল্পে মোট তিনটি ধাপে ৯৩টি সাবমার্সিবল পাম্প বসানো ও নদী সেচপ্রকল্প গড়ে তোলার প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। আউশগ্রাম ১ ও ২-এ ৭৬টি, গলসি ১ ও ২-এ দু’টি, কাঁকসা, কালনা, পূর্বস্থলীতে একটি করে এবং মঙ্গলকোট ও বর্ধমান সদরে ১৫টি ক্ষুদ্র সেচপ্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ২৯টি প্রকল্প চালুও হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলির কাজ চলতি বছরের মার্চের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে আশা দফতরের আধিকারিকদের। এই প্রকল্পের আওতায় জেলার প্রায় তিন হাজার হেক্টর কৃষিজমি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রকল্প রূপায়ণ কী ভাবে হচ্ছে? প্রকল্প আধিকারিক ত্রিদিব রিভস জানান, সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের চাহিদা, চাষের জন্য জলের প্রয়োজন-সহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে একটি বেসরকারি সংস্থা। তথ্য খতিয়ে দেখে এলাকাবাসীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রকল্প আধিকারিক ও কর্মীরা। তার পরেই সেচের কাজ শুরু হয়। তবে তার আগে বেশ কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করতে হয় বলে ত্রিদিববাবুর দাবি। যেমন, ভূগর্ভের কতখানি নীচের জল ব্যবহার করা হবে, জলের চরিত্র কেমন তা বুঝতে প্রায় ১৫ ধরনের পরীক্ষার পরেই প্রকল্প তৈরির কাজে হাত দেওয়া হয়। এমনটা না হলে চাষে ক্ষতি, জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে বলে প্রকল্প আধিকারিকদের দাবি।
প্রকল্পটি নিয়ে আশাবাদী এলাকার চাষিরা। আউশগ্রাম ২-এর দেবশালা পঞ্চায়েতের লবনধার গ্রামে ৩১টি সাবমার্সিবল পাম্প তৈরি করা হয়েছে। এই ব্লকের শ্যামসুন্দরপুর, রায়কোনার মতো গ্রামগুলিতে প্রকল্প চালুও হয়েছে। সেখানে বোরো ধানের পাশাপাশি ডালশস্যও চাষ হচ্ছে বলে জানান চাষিরা। এলাকার বাসিন্দা বিশ্বরূপ মণ্ডল, অনিল ঘোষ, শান্তি মাঝিরা বলেন, ‘‘বহু বার বর্ষায় ভাল বৃষ্টি না হওয়ায় ধান শুকিয়ে গিয়েছে। এর ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। আশা করি, সেই দিন আর দেখতে হবে না। ধান ছাড়াও বছরভর ফলবে বিভিন্ন ফসল।’’ প্রকল্পগুলি দেখভালের জন্য বাসিন্দাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে বলে জানান দফতরের আধিকারিকেরা।
প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে আশাবাদী কর্তারাও। ত্রিদিববাবু বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হল, একফসলি জমিকে বহুফসলি করে তোলা। তা ছাড়া কিছু এলাকায় জলের অভাবে অনেক সময় চাষ ঠিক মতো করা যায় না। এই সব সমস্যায় আশা করি দূর হবে।