ভর্তি শিশু ওয়ার্ড। নিজস্ব চিত্র।
চলতি মাসে এখনও পর্যন্ত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভোগা ন’জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। প্রতিদিন ওই ধরনের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানে ২৫ শয্যার একটি ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন ওয়ার্ড’ খোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।
সুপার বলেন, ‘‘শিশুদের মধ্যে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। চলতি মাসে ন’জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা সকলেই জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে কোনও আপস করা হচ্ছে না। চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মী— পুজোর সময় প্রত্যেকেরই ছুটি বাতিল করা হয়েছিল। পুজোর সময়ও তাঁরা কাজ করেছেন। আরও একটি ২৫ শয্যার এআরআই ওয়ার্ড চালু করছি।’’
শিশুবিভাগ সুত্রে জানা গিয়েছে, জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে সদ্যোজাতদের মধ্যে। বয়স ছ’মাসের কম, এমন শিশুদের মধ্যে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভোগার প্রবণতা বেশি। চলতি মাসে যে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের সকলেরই বয়স ছ’মাসের নীচে। হাসপাতালে ১২০ শয্যার শিশুবিভাগের ছাড়াও, রয়েছে ৬৫ শয্যার একটি ‘এআরআই’ ওয়ার্ড। বুধবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি শিশুর সংখ্যা কমবেশি ১৩০। তাদের অর্ধেকের বয়স ছ’মাসের কম৷
শিশুবিভাগের এক চিকিৎসক জানান, সদ্যোজাত শিশুরা সাধারণত ঠান্ডা লাগার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। তার পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছে তাদের। কিছু ক্ষেত্রে তা জটিল আকার নিচ্ছে। হাসপাতালের শিশুবিভাগের প্রধান কৌস্তুভ নায়েকের দাবি, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। চলতি মাসে সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজার শিশু ভর্তি হয়েছিল। ন’জনকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বাকিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। ওষুধ, অক্সিজেন ও শয্যা নিয়ে সমস্যা নেই। আরও একটি ওয়ার্ড খোলা হচ্ছে। সমস্যা হবে না।’’
হাসপাতাল সূত্রে খবর, সেপ্টেম্বরে ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বহু শিশু ভর্তি হলেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে এ মাসে কী হল? হাসপাতালের শিশুবিভাগের চিকিৎসকদের একাংশের দাহি, ‘‘এক টানা বৃষ্টির জেরে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এতেই ভাইরাল ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ঘটিত জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে শিশুদের মধ্যে। সে কারণেই শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।’’
বর্ধমান মেডিক্যালের অধ্যক্ষ প্রবীর সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সোমবার শিশুবিভাগের পরিকাঠামো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন অনেক বেশি শিশু ভর্তি হচ্ছে। তাই আরও একটি ওয়ার্ড তৈরি করছি। দু’-এক দিনের মধ্যেই সেটি চালু হবে।’’