ফাইল চিত্র ।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে তাণ্ডব চালিয়ে নার্স, আয়া-সহ বেশ কয়েকজন কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠল রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বুধবার রাতে এই ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হয়। অভিযুক্ত সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার হাসপাতালের রাধারানি ওয়ার্ডে ভর্তি হন কেতুগ্রামের নবগ্রামের বছর আটাত্তরের এক ব্যক্তি। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল থেকে তাঁকে বর্ধমানে আনা হয়। বুধবার সন্ধ্যায় রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পরিজনেরা তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত সিস্টার ইন-চার্জকে অক্সিজেনের বন্দোবস্ত করতে বলেন। কিছুক্ষণ পরে কেন অক্সিজেন দিতে দেরি হচ্ছে, এই প্রশ্ন তুলে তাণ্ডব শুরু করেন তাঁদের একাংশ।
অভিযোগ, সিস্টার ইন-চার্জকে নিগ্রহ করা হয়৷ তা দেখে ছুটে যান ওয়ার্ডে থাকা আয়া ও অন্য কর্মীরা। বছর পঁয়ষট্টির এক আয়াকে মারধর করা হয়। নিস্তার পাননি আর এক আয়া ও এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীও। আয়া রমা দাসের অভিযোগ, ‘‘গোলমাল থামাতে গেলে দু’জন আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেয়। মোবাইল দিয়ে মাথার সামনে আঘাত করা হয়। কেটে গিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে আমার।’’ আর এক আয়া মঞ্জু দে অভিযোগ করেন, ‘‘দুই মহিলা-সহ ছ’-সাত জন গোটা ওয়ার্ডে কার্যত তাণ্ডব চালায়। আমি ছুটে গিয়ে পুলিশ ক্যাম্পে খবর দিই।’’ এই গোলমালের জেরে ওয়ার্ডের অন্য রোগী ও পরিজনেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
ঘটনাস্থল থেকে দুই মহিলা-সহ সাত জনকে ধরে পুলিশ। হাসপাতালের নার্স অনিন্দিতা রায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে কর্তব্যরত অবস্থায় সরকারি কর্মীকে মারধর, কাজে বাধা, বেআইনি জমায়েত-সহ কয়েকটি ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। ধৃত কাশ্মীরা নাথ ও ইন্দিরা দাসের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। বাকি ধৃত রানা দাস, বিপ্লব দাস, অভিষেক নাথ, সৌম্যদীপ দাস ও ঋক অধিকারীকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম রঞ্জনী কাশ্যপ।
ওই রোগীর এক আত্মীয় সুমন দাস যদিও দাবি করেন, ‘‘আমরা কিছু প্রশ্ন করায় হাসপাতালের রক্ষীরাই এসে আমাদের মারধর করেন। তবে এমন ঘটনা না ঘটলেই ভাল হত।’’ রোগীর চিকিৎসা ঠিকমতোই হচ্ছে বলে জানান তিনি। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মী ও রোগীর পরিজনদের মধ্যে গোলমালের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার কুণালকান্তি দে বলেন, ‘‘দুঃখজনক ঘটনা। দু’তরফেই সংবেদনশীল হতে হবে।’’