খোলা কলে মুখ বসিয়ে জোর জল-সচেতনতায়

আসানসোল পুরসভা সম্প্রতি সমীক্ষা করে দেখেছে, সালানপুর, কুলটি, রানিগঞ্জ-সহ জেলার নানা প্রান্তে মাটির নীচের জলস্তর বিপদসীমা ছুঁইছুঁই।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯ ০১:২৫
Share:

শিক্ষকদের উদ্যোগে। ছবি: পাপন চৌধুরী

রাস্তায় খোলা কল দেখলেই ওঁরা হাজির। এ ভাবেই শহরের নানা প্রান্তে কলে মুখ (ট্যাপ) বসিয়ে জলের অপচয় রোখেন অভিজিৎ দেবনাথ, অমিতাভ চক্রবর্তী, অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় নামে আসানসোলের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তিন শিক্ষক। গত এপ্রিল থেকে তাঁরা এই কর্মসূচি নিয়েছেন।

Advertisement

আসানসোল পুরসভা সম্প্রতি সমীক্ষা করে দেখেছে, সালানপুর, কুলটি, রানিগঞ্জ-সহ জেলার নানা প্রান্তে মাটির নীচের জলস্তর বিপদসীমা ছুঁইছুঁই। অথচ, বেআইনি ভাবে বহু কল কারখানা পানীয় জল শিল্পের কাজে ব্যবহার করা হয় বলে পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ। চেন্নাই-সহ দেশের নানা প্রান্তে চলছে জলের ব্যাপক সঙ্কট। সম্প্রতি রাজ্য সরকার রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ‘জল সংরক্ষণ ও জলের অপচয় রোধে গণ সচেতনতা’ তৈরির ডাক দিয়েছে। সম্প্রতি যে সব এলাকায় ধারাবাহিক ভাবে জলের কল ভাঙা হচ্ছে, সেখান থেকে জল অপচয় রোধে কল সরিয়ে নেওয়ার পথে হাঁটতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। ‘জল বাঁচান’, এই ডাককে সামনে রেখে শুক্রবার থেকে রাজ্যে শুরু হয়েছে বিশেষ কর্মসূচিও।

এই পরিস্থিতিতে দিন কয়েক আগেই শহরের মহিশীলায় ননীগোপাল স্কুলমোড়ের কাছে রাস্তার একটি কলে মুখ পরানোর সময়ে ওই তিন শিক্ষক পথচারীদের অনুরোধ করছিলেন, ‘‘দয়া করে কেউ ট্যাপ ভাঙবেন না। কোথাও কলে মুখ নেই খবর পেলে আমাদের জানাবেন। আমরা নিখরচায় সেখানে মুখ বসিয়ে দেব।’’

Advertisement

ওই শিক্ষকেরা জানান, এ যাবৎ তাঁরা প্রায় শতাধিক কলে মুখ বসিয়েছেন। সে জন্য খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার টাকার মতো। এই কাজ করার সময়েও বাসিন্দাদের ডেকে চলে সচেতনতা প্রচার। সম্প্রতি ‘সোশ্যাল মিডিয়া’তেও বিষয়টি নিয়ে ‘পোস্ট’ করে তাঁরা সচেতনতা প্রচার শুরু করেছেন। সেখানে অনুরোধ, ট্যাপ না থাকা কলের খবর দিন।

সেই ‘খবর’ মিলছেও। মহিশীলার সবুজপল্লির বাসিন্দা সীমা সিংহ জানান, সম্প্রতি ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় ‘পোস্ট’ দেখে তিনি অভিজিৎবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার পরে ওই শিক্ষকেরা কলে মুখ বসিয়ে দেন। সীমাদেবী বলেন, ‘‘কলটি থেকে ফি দিন দু’শোজন মানুষ পানীয় জল নেন। কিন্তু গত দু’বছর সে কলের মুখ না থাকায় প্রচুর জল নষ্ট হচ্ছিল। মাঝে পুরসভা একটি মুখ লাগালেও সেটি ভেঙে যায়। শিক্ষকেরা এই কাজ করায় আমরা খুবই খুশি।’’

কিন্তু এই কাজ কেন করা? ওই শিক্ষকেরা জানান, দেশের নানা প্রান্তে জল-সঙ্কট এবং আগামী কয়েক বছরে দেশের নানা এলাকায় সেই সঙ্কট আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগেভাগেই তাঁরা পথে নেমে সচেতনতা তৈরি করতে চেয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘এখনই জল সংরক্ষণ ও জলের অপচয় বন্ধে সচেষ্ট না হলে বড়সড় বিপর্যয় নেমে আসবে জনজীবনে। আমাদের আশা, এই উদ্যোগে শহরবাসীর মধ্যে জল-সচেতনতা গড়ে উঠবে।’’

তবে এই মুখ লাগানোর কাজটি করার কথা আসানসোল পুরসভার। ফলে, তারা সেই কাজ কেন করছে না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। জলের অপচয় রোখায় তাদের পরিকল্পনা কী? শিক্ষকদের ভূমিকা স্বাগত জানিয়ে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার (সুপারিন্টেন্ডেন্ট) সুকোমল মণ্ডল বলেন, ‘‘বহু বার ট্যাপ বসানো হলেও সেগুলি নানা কারণে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমরা ফের এ বিষয়ে উদ্যোগী হব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement