গ্রেফতার অরবিন্দ নন্দী। নিজস্ব চিত্র।
অবৈধ লোহার কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগে দুর্গাপুরের তৃণমূলের তিন নম্বর ব্লক সহ-সভাপতি শুভাশিস ওরফে রিন্টু পাঁজা ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন পুর প্রতিনিধি অরবিন্দ নন্দীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার তাঁদের দুর্গাপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠান। তৃণমূলের দাবি, দলের কেউ দুর্নীতিতে জড়ালে, দায় দল নেবে না।
দুর্গাপুরের কোকআভেন থানা এলাকার রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুক, লেনিন সরণি শিল্পতালুক, আরআইপি শিল্পতালুকে বেশ কিছু বেসরকারি কারখানা বন্ধ পড়ে রয়েছে। সেখান থেকে লোহার যন্ত্রাংশ কেটে সরিয়ে ফেলার অভিযোগ বহু পুরনো। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, একটি চক্র এর পিছনে রয়েছে। কিন্তু বার বার থানায় জানিয়েও লাভ হয়নি। বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বালি, লোহা, কয়লার বেআইনি কারবার বন্ধে সরব হন। পুলিশের কর্তাদের কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেন। রাতে কর্তব্যে পেশাদারিত্বের অভাবের অভিযোগ তুলে সাসপেন্ড করা হয় আসানসোলের বারাবনির ওসি মনোরঞ্জন মণ্ডলকে। ওই রাতেই কোকআভেন থানায় ডেকে পাঠানো হয় দুর্গাপুরের দুই তৃণমূল নেতা রিন্টু ও অরবিন্দকে। রাতভর জেরার পরে ভোরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্তদের তরফে অন্যতম আইনজীবী রাহুল মুখোপাধ্যায় জানান, কাঞ্জিলাল অ্যাভিনিউয়ের একটি বন্ধ বেসরকারি ইস্পাত কারখানা থেকে লোহা চুরির অভিযোগে দুজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সোমবার ফের তাঁদের আদালতে তোলা হবে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের জেরা করে বন্ধ বেসরকারি কারখানা থেকে চুরি যাওয়া যন্ত্রাংশ উদ্ধারের চেষ্টা হবে।
এ দিন দুর্গাপুর থানা থেকে আদালতে যাওয়ার পথে অরবিন্দ মুখ খুলতে চাননি। তবে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন পুর প্রতিনিধি প্রিয়াঙ্কা পাঁজার স্বামী রিন্টু দাবি করেন, ফোন করে তাঁর ও অরবিন্দের মধ্যে অশান্তি মিটিয়ে দেওয়ার নাম করে মিনিট পাঁচেকের জন্য থানায় ডেকে পাঠানো হয়। কেন গ্রেফতার করা হয়েছে তা তিনি বুঝতে পারছেন না। দল তাঁর সঙ্গে আছে বলেও দাবি করেন। এ দিন বহু তৃণমূল নেতা-কর্মী আদালতে ভিড় করেন। যদিও দলের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের দাবি, ‘‘যত বড় নেতা বা নেতার অনুগামী হন, বেআইনি কাজ করলে দল তাঁর পাশে থাকবে না।”
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, “লোহা চুরি, বালি চুরি, দামোদরের ধারে ডিভিসির জমি দখল করে রিসর্ট তৈরি, মানা চরে পোস্ত চাষের মতো নানা অভিযোগ রয়েছে এই সব নেতাদের বিরুদ্ধে। ঠিকঠাক তদন্ত হলে তৃণমূলের অনেক বড় মাথাও ছাড় পাবে না।” বিজেপির দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, “দুর্নীতি আরতৃণমূল সমার্থক। দুর্গাপুরে দু’জন নেতাকে গ্রেফতার করা নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়।”