শুক্রবার দুর্গাপুর আদালতে ধৃতেরা। নিজস্ব চিত্র
দুই কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগে নৃত্য প্রশিক্ষক-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করল দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানার পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃত প্রশিক্ষক মহম্মদ হোসেন দুর্গাপুরের মুচিপাড়ার বাসিন্দা। তাঁর সহযোগী ধৃত মুর্তাজা আনসারির বাড়ি সিউড়িতে।
পুলিশ জানায়, বছরখানেক ধরে বিধাননগর ফাঁড়ি এলাকায় নাচের স্কুল চালান মহম্মদ হোসেন। এলাকার প্রায় ১২-১৪ জন তাঁর কাছে নাচ শেখে। অভিযোগ, কলকাতায় নাচের প্রতিযোগিতা আছে, এই বলে নাচের স্কুলের এক শিক্ষার্থী ও সেই শিক্ষার্থীর এক বান্ধবীকে নিয়ে গত ১২ নভেম্বর দুর্গাপুর স্টেশন চত্বরে যান হোসেন। দু’জনেই বিধাননগরের একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। যদিও ট্রেনে না উঠে ওই দুই ছাত্রীকে নিয়ে বাসে সিউড়ি চলে যান হোসেন। ওই দুই ছাত্রীকে নিয়ে পূর্ব-পরিচিত মুর্তাজার বাড়িতে ওঠেন হোসেন। ১৩ নভেম্বর ওই দুই কিশোরী ও মুর্তাজার মা’কে নিয়ে দুমকায় যান হোসেন। পরের দিনই ফের দুমকা থেকে সবাই সিউড়িতে ফেরেন। ১৫ নভেম্বর ভোরে নাচের স্কুলের শিক্ষার্থীর বান্ধবী কোনও ভাবে সিউড়ি থেকে দুর্গাপুরে পালিয়ে এসে ঘটনার কথা বাড়িতে জানায়।
ইতিমধ্যে ওই নৃত্য-শিক্ষার্থী কিশোরীর বাবা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পুলিশ হোসেন ও মুর্তাজা, দু’জনেরই মোবাইলের টাওয়ার ধরে তাঁদের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে। বৃহস্পতিবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মুর্তাজাকে সিউড়ি থেকেই আটক করে নিউটাউনশিপ থানার পুলিশ। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরে শুক্রবার ভোরে দুমকার একটি বাড়ি থেকে হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় নৃত্য-শিক্ষার্থী ওই কিশোরীকেও।
আরও পড়ুন: ঠিক যেন ২০১৯-এর মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র! সাজেশনের বিজ্ঞাপনী ভাষা নিয়ে ঘোর বিতর্ক
শুক্রবার উদ্ধার হওয়া ওই কিশোরী পুলিশের কাছে অভিযোগ করে, দুমকায় তাকে একটি বাড়িতে আটকে রেখে ঘর মোছা, কাপড় কাচা-সহ নানা কাজ করানো হত। তার বাবা এ দিন আদালতে বলেন, ‘‘এর আগেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছে হোসেন। থানায় অভিযোগ দায়ের না হওয়ায় রেহাই পেয়েছে। এ বার আর ছাড় পাবে না। উপযুক্ত সাজা হোক ওর। মেয়েকে বিক্রি করে দেওয়া বা অন্য কোনও খারাপ উদ্দেশ্য ছিল হোসেনের।’’
পুলিশ জানায়, ১৫ নভেম্বর পালিয়ে আসা কিশোরী অভিযোগ করেছে, তার বান্ধবীকে জোর করে বিয়ে করারও পরিকল্পনা ছিল হোসেনের। ওই কিশোরীর বাবার অনুমান, ‘‘নারী পাচারকারী চক্রের সঙ্গে নাচের শিক্ষক ও তাঁর সহযোগীর যোগ রয়েছে।’’ পুলিশ জানায়, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পস্কো আইন ও ভুল বুঝিয়ে নিয়ে গিয়ে জোর করে বিয়ে করার চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হাতে স্টিয়ারিং, চোখ মোবাইলের ডান্স আইটেমে, এ ভাবেই বাস চালিয়ে গেলেন ড্রাইভার!
এ দিন ধৃত দু’জনকেই দুর্গাপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জেল-হাজতের নির্দেশ দেন। হোসেন ও এ দিন উদ্ধার হওয়া কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষাও করানো হয়েছে। আদালতে ওই কিশোরীর গোপন জবানবন্দিও রেকর্ড করা হয়েছে।