প্রতারণায় ধৃতের সঙ্গে পুলিশ আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র
মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের পুলিশ আধিকারিকের ভুয়ো পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের অম্বুজা টাউনশিপের একটি ভাড়াবাড়ি থেকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় নামে পুরুলিয়ার মণিহারার এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। শনিবার ধৃতকে দুর্গাপুর আদালতে তোলা হলে তাকে দশ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত বলেন, ‘‘ধৃতের পাশাপাশি, আরও অনেকে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। ধৃতকে জেরা করে তাদের সন্ধান জানা হবে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বাঁকুড়ার বাসিন্দা প্রবীর প্রামাণিক ধৃতের বিরুদ্ধে পুলিশে চাকরি দেওয়ার নাম করে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। প্রবীরবাবু জানান, সিটি সেন্টারে তাঁর দোকানে ধৃত যুবকের বেশ কিছু দিন ধরে যাতায়াত ছিল। কথায়-কথায় তাঁকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে টাকার কথা বলেনি। পরে টাকা চাইল। দিন কুড়ি আগে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা দিই তাকে। পরে বুঝতে পারি, ভুল করেছি। আমার পরিচিত এক মহিলার কাছেও সে টাকা নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’’
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ অভিযুক্ত যুবককে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, ওই যুবকের ভাড়াবাড়ি থেকে চারটি নকল আগ্নেয়াস্ত্র, দু’টি মোবাইল, সিমকার্ড ও বেশ কিছু ভুয়ো নিয়োগপত্র, বিভিন্ন ধরনের ভুয়ো পরিচয়পত্র মিলেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও হিরাপুর থানা এলাকার যুবকেরা ‘প্রতারকে’র মূল ‘টার্গেট’ ছিল। গত ছ’মাস ধরে প্রসেনজিৎ অম্বুজা টাউনশিপে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। উদ্ধার হওয়া নকল আগ্নেয়াস্ত্রগুলির ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হবে বলে জানান ডিসি (পূর্ব) অভিষেকবাবু।
উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ধৃত প্রসেনজিৎ আদালতে যাওয়ার পথে পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে দাবি করে, আসানসোলে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সে তাকে মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দিতে বলে। ধাপে-ধাপে টাকাও দেয় সে। এর পরে তাকে বলা হয়, তার ‘টিম’ তৈরি করতে গেলে আরও এক জন যুবককে দরকার। সে যদি তা জোগাড় করতে পারে তবেই চাকরি হবে তার। পুলিশের দাবি, জেরায় প্রসেনজিৎ তাঁদের জানিয়েছে, এর পরেই প্রবীরবাবুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসানসোলের ওই ব্যক্তির কাছে তা পৌঁছে দেয়। এর পরে প্রসেনজিৎকে ‘নিয়োগপত্র’ ও পরিচয়পত্র দেয় আসানসোলের ওই ব্যক্তি। তবে পুলিশের কাছে প্রসেনজিতের দাবি, পরিচয়পত্রে ভুয়ো বানান দেখে সন্দেহ হয়। কিন্তু তার পরে আসানসোলের ওই ব্যক্তির সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়নি বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে সে।
তদন্তকারীরা জানান, দুর্গাপুরের পলাশডিহার এক বাসিন্দার থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে আসানসোল, রানিগঞ্জ ও দুর্গাপুরের নানা এলাকায় প্রসেনজিৎ বিভিন্ন জায়গায়
যাতায়াত করত।