সেজে উঠছে নবপল্লি সর্বজনীন।
গত দু’বছরে বাদ সেধেছিল করোনা। দুর্গাপুজোতেও ছিল বৃষ্টি। সেই বাধা কাটায় এ বার কালীপুজোর জন্য সেজে উঠছে বারাসত ও মধ্যমগ্রাম।
ভিন্ রাজ্য তো বটেই, বিদেশ থেকেও অনেকে বারাসতে আসেন কালীপুজো দেখতে। ভিড় সামাল দিয়ে পুজো-পর্ব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে প্রস্তুত পুলিশ-প্রশাসনও। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এই ক’দিন বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে জেলা সদর জুড়ে। সিসি ক্যামেরায় নজরদারি চলবে। সমস্যা হলেই পৌঁছে যাবে পুলিশ।’’
ক্লাবের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে এ বার উত্তর আফ্রিকার কাসবাহ দুর্গ তৈরি করছে বারাসত স্টেশন সংলগ্ন পায়োনিয়ার অ্যাথলেটিক ক্লাব। পাঁচশো বছরের পুরনো ওই দুর্গ ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমাও পেয়েছে। শিল্পী শঙ্কর পালের হাতে বিশাল মাঠ বদলে গিয়েছে মরক্কোয়। পুকুর হয়েছে নদী।
বারাসত থানা সংলগ্ন কেএনসি রেজিমেন্টে দেখা যাবে শ্রীলঙ্কার আলোর উৎসব। রূপায়ণে রয়েছেন শিল্পী বুবু সিংহ রায়। রেজিমেন্টের ভাবনা, ‘সৃষ্টি।’ সভ্যতার বিকাশে মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস। কৃষ্ণনগরের সাবেক প্রতিমা দেখা যাবে এই ক্লাবে।
করোনা-পরবর্তী সময়ে মর্তের মানুষ কেমন আছে, তা দেখতে লিফটে চড়ে নেমে দর্শকদের দেখা দেবেন সন্ধানীর দেবী। এলইডি স্ক্রিনেও দেখা যাবে সেই দৃশ্য। নবপল্লি সর্বজনীনে পাহাড়ের কোলে কেদারনাথের মন্দিরে থাকবে শিবলিঙ্গ। নবপল্লির আমরা সবাই ক্লাবে দেখা যাবে, কর্নাটকের ৯২ ফুট উঁচু কোটি লিঙ্গেশ্বর মন্দিরে ৭০০টি শিবলিঙ্গ এবং ১২টি শিবমন্দির। প্রতিমা তৈরি হয়েছে সুতো দিয়ে। নবপল্লি ব্যায়াম সমিতির এ বারের থিম ‘ত্রি-শক্তি’। শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দার গড়ছেন এক মায়াবি নাটমন্দির।
জাগৃতী ক্লাবে প্লাই, মাটির সরা, কাগজের পাখা ও নানা আসবাব দিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’। তরুছায়ার থিম ‘দৃষ্টিকোণ’। তারা দেখাবে, দৃষ্টিহীনদের কাছে এই পৃথিবী রংহীন এক বর্ণমালা। সাউথ ভাটরাপল্লির পুজোয় দেখা যাবে বারাণসীর দশাশ্বমেধ ঘাট। সেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যারতি করবেন পুরোহিতেরা। বারাসত মৎস্য আড়তদার কল্যাণ সমিতির পুজোয় পাহাড় কেটে তৈরি মন্দিরে দেখা মিলবে মুক্তোর প্রতিমার।
পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জনের ডাক দিয়েছে ন’পাড়া ওয়েলফেয়ার কমিটি। তাদের থিম ‘দূষণ থেকে বাঁচতে সবুজের আশ্রয়ে’। এ বার সুবর্ণ জয়ন্তী নেতাজি সঙ্ঘেরও। তাদের থিম ‘নীতি-মালা’। ছবির সঙ্গে থাকবে ছোটদের হিতোপদেশের গল্প। দর্পণে প্রতিবিম্ব গড়ে দর্শক টানবে সংহতি ক্লাব। কাচের কারুকাজে দেখা যাবে কয়েক হাজার জ্বলন্ত মাটির প্রদীপ।
রাইজ়িং স্টারে এ বার টেরাকোটা গ্রাম। বেত, মাদুর, পুতুল ও খাগড়া দিয়ে তৈরি মণ্ডপে পোড়ামাটির প্রতিমা। কল্যাণ সমিতির সাবেক প্রতিমা নজর কাড়বে। শক্তি মন্দিরের এ বারের ভাবনা ‘রাঙা মাটির দেশ’। জঙ্গলের গাছ, সূর্যমুখী ফুলের মণ্ডপে দেবী আদিবাসী রূপে।
৩৪ ও ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে থাকবে পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র ও নানা সংস্থার স্টল। বারাসত-টাকি রোডের দু’দিকও বদলে যাবে অন্য রূপে। আগুয়ান সঙ্ঘের এ বার ৫০ বছর। পাহাড়ি গুহা, ঝর্নার মাঝে ডাকাতের ডেরায় জ্বলবে মশাল। পাথর কেটে তৈরি হচ্ছে ৫১ ফুটের প্রতিমা।
বিদ্রোহী ক্লাব তৈরি করেছে হিমাচল প্রদেশের বাবা মন্দির। টিনের মণ্ডপে ভগীরথের প্রার্থনায় শিব গঙ্গাকে জটায় ধারণ করছেন। শতদল সঙ্ঘের থিম ‘স্বপ্ন-সুন্দর প্রকৃতির প্রত্যাশা’। সবুজ ধ্বংসের কারণে প্রকৃতি ভারসাম্য হারিয়েছে। তাই স্বপ্নের মতো সুন্দর প্রকৃতি গড়ার বার্তা দেবে এই পুজো।
করোনা ও ডেঙ্গির মতো রোগ থেকে মুক্তিই ভাবনা বালকবৃন্দের। ফাইবার-ফোমের মণ্ডপে সুতোর তৈরি প্রতিমা, আলোর খেলা। যুব গোষ্ঠীর থিম ‘শৈশবের সর্বনাশ’। থাকছে মাটির বিভিন্ন পুতুল। দুর্গা রূপে কালী অসুররূপী মোবাইলকে ধ্বংস করবেন। ইয়ং স্টার অ্যাসোসিয়েশনের থিম ‘মাটির টানে’। মাটির পুতুল, কাঠের মণ্ডপে অশুভ শক্তি বিনাশ করবেন দেবী।
বারাসতের সঙ্গে পাল্লা দেবে মধ্যমগ্রামের কালীপুজোও। এমনই দাবি মধ্যমগ্রামের বিধায়ক, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের। সেখানকার মাইকেলনগরের নেতাজি সঙ্ঘে গড়ে উঠেছে বাহুবলীর মহেশমতি রাজপ্রাসাদ। রামায়ণের থিমে প্রতিমা, চন্দননগরের আলোয় সরকারি প্রকল্পের প্রচার। ইয়ং রিক্রিয়েশনের থিম ‘সৃষ্টির পথে উৎসব।’ইয়ং সেন্টারে দেখা যাবে ‘রঙের খেলায়, আলোর মেলায় ওঁরা কেমন আছেন’। লকডাউনে শিল্পীরা কেমন ছিলেন, সেটাই উপজীব্য এই পুজোয়। করোনা এ ভাবে প্রভাব রেখে যাচ্ছে কালী-আরাধনাতেও।