বিদ্যুৎ, রাস্তা, রেল-বন্দর, এলপিজি টার্মিনাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চটের বস্তা— দানের তালিকা খর্ব নয়। কিন্তু তাতেও মন ভার গ্রহীতার। জল চাই তার জল— তিস্তার জল।
গত ২৩-২৪ জানুয়ারি দিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশ বহুমাত্রিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার মূল নির্যাস এটাই। বিদেশ মন্ত্রক, পেট্রলিয়াম মন্ত্রক এবং কলকাতার ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ (আইএসসিএস)-এর উদ্যোগে এই আলোচনা সভায় ছিলেন দু’দেশের চার মন্ত্রী। আলোচনায় অংশ নেন দু’দেশের বেশ কয়েক জন কূটনীতিকও। কিন্তু গত সাত বছরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সর্বোচ্চ অবস্থানে থেকেও কোথাও যেন তাল কেটে যাচ্ছিল। এর কারণ অবশ্যই তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নে অপারগতা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক জানান, একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে ১,৬৮৬ জন ভারতীয় সেনা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা আর মানপত্র দিচ্ছে শেখ হাসিনা সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত না-থাকলে আজ আমরা দেশই পেতাম না।’’ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফর পর পর দু’বার বাতিল হওয়াটা মোটেই শুভ সংকেত নয়। কেন স্থগিত হচ্ছে সফর? মোজাম্মেল সাহেবের কথায়, ‘‘বড় কারণ অবশ্যই তিস্তার পানি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা। ভারতকে এ বার একটু তৎপর হতে হবে।’’
ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক চাঙ্গা রাখতে ভারতের তৎপরতার কথা আলোচনার শুরুতেই জানিয়েছিলেন বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন। তিনি বলেন, ‘‘২০১৫ সালে ৭.৫৩ লক্ষ বাংলাদেশিকে ভিসা দেওয়া হয়েছিল, ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৯.৬ লক্ষ। এতেই স্পষ্ট আদানপ্রদান আজ কতটা নিবিড়।’’ কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির কথায়,‘‘সংস্কৃতি তো এক। জামদানি দু’দেশেই তৈরি হয়। জামদানির সূত্রেও তো বাঁধা পড়তে পারে দু’দেশ।’’ সেই সূত্রেই এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে এলপিজি টার্মিনাল, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গ্যাস পাইপলাইন তৈরির বিষয়ও। পেট্রলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন ভারত-রাশিয়া গ্যাস পাইপলাইন তৈরি হলে তা মায়ানমার-বাংলাদেশের মধ্যে দিয়েও আনা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গ্যাস তো পাবেই, ট্রানজিট দিয়ে বহু রাজস্ব আদায় করতে পারবে বাংলাদেশ।
কিন্তু গ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে তিস্তার জলের দাবি থেকেও সরছেন না বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের হাই-কমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলির আক্ষেপ, ‘‘আমরা তো প্রস্তুত। কিন্তু ভারতকে তো নিজেদের অভ্যন্তরীন সমস্যা মেটাতে হবে। সেই সমস্যা যাতে দ্রুত মেটে তার দিকে আমরা তাকিয়ে আছি।’’
তিস্তার প্রসঙ্গই অবশ্য তোলেননি বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। তাঁর সাফ কথা, ‘‘আজ না-হোক কাল ঢাকা-দিল্লির বন্ধুত্বের সব সমস্যা মিটে যাবে। সব সমস্যা একেবারে মিটে গেলে তো মন্ত্রী-কূটনীতিকদের চাকরিই থাকবে না!’’