পর্যটনমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। ফাইল চিত্র।
কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপের আকাশ যখন সবুজ আবিরে ছয়লাপ, তখন পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার প্রসঙ্গ টানলেন মন্ত্রী রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। মঙ্গলবার পঞ্চায়েত ভোটের ফল ঘোষণার মধ্যে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মন্তব্য করলেন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হলে বাবুল স্পষ্টই বলেন, ‘‘তৃণমূল এমনিতেই জিতত। যে সব জায়গায় গন্ডগোল হয়েছে তার দরকার ছিল না!’’
বাবুল কেন্দ্রের প্রাক্তন মন্ত্রী। অধুনা মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায়। পঞ্চায়েতের ভোটগণনার দিন তিনি যা বলেছেন, তা যথেষ্ট ‘গুরুত্বপূর্ণ’ও বটে। বাবুল বলেন, ‘‘এটা সত্যি যে, প্রায় ৭০ হাজার বুথের মধ্যে যে ১০০টি বুথে গন্ডগোল হয়েছে, সেটাই সংবাদমাধ্যম বার বার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখাচ্ছে। কিন্তু আমি সংবাদমাধ্যমকে দোষ দিতে রাজি নই। ৭০টি বুথের গন্ডগোল থেকে যদি ৪০টি প্রাণ যায়, তা হলে আমাদের সকলকে বিড়ম্বনায় ফেলে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, নিচুতলার কর্মীরা এই সমস্ত গন্ডগোল করায় বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সমালোচনার রাস্তা করে দিচ্ছেন। বাবুলের কথায়, ‘‘মমতাদিদি এবং অভিষেক, যাঁরা অত্যন্ত দৃঢ় ভাষায় বার বার বলেছিলেন যে, এ সব বরদাস্ত করা হবে না, তাঁদের গায়ে কাদা ছেটানোর সুযোগ পেয়ে যায় বিরোধীরা। তারা (বিরোধীরা) নিজেরাও চেয়েছিল গন্ডগোল হোক এবং তৃণমূল কলুষিত হোক।’’
এরই পাশাপাশি রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল জানিয়েছেন, নিচুতলার কর্মীদের বিষয়টি বুঝতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের নীচের তলার কর্মীদের বুঝতে হবে যে, মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করতে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যে প্রকল্পগুলি চালু করেছেন তাতে মানুষ খুশি। এমনিতেই তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দিতেন। এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করার দরকারই ছিল না।’’ অর্থাৎ বাবুল মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনায় বিরোধীরা হাতে ‘অস্ত্র’ পাচ্ছে। আর মমতা এবং অভিষেক সম্পর্কে জনমানসে ‘বিরূপ’ ধারণা তৈরি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত ভোটের দিন বিরোধীরা যে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ‘সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ করেছিল, সে বিষয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও বলেছিলেন, ‘‘৬১ হাজার বুথের মধ্যে মাত্র ৬০টি বুথে বিরোধীরা পরিকল্পনা করে অশান্তি করেছে।’’ তৃণমূলের মুখপত্রেও সে কথা লেখা হয়েছিল। তবে ভোটে ‘সন্ত্রাস এবং হিংসা’ নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে সোমবার থেকে সমালোচনার সুর শোনা যাচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর, মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর ‘ভোট-হিংসা’ নিয়ে সরব হয়েছেন। প্রাক্তন পুলিশ অফিসার হুমায়ুন যেমন বলেছেন, ‘‘বাঙালি হিসেবে মাথা হেঁটে হয়ে যাচ্ছে’’, তেমনই মুর্শিদাবাদের রাজনীতিক হুমায়ুন বলেছেন, ‘মমতা-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত শিল্পী শুভাপ্রসন্নও নতুন করে ‘পরিবর্তন’-এর কথা বলেছেন। আবার তৃণমূল বিধায়ক তথা অভিনেতা চিরঞ্জিৎও বাম জমানা শেষ হওয়ার উদাহরণ তুলে বলেছেন, ‘‘এ ভাবে জেতার কোনও অর্থ হয় না। মানুষ ঘুরে গেলে এমন ভাবেও ক্ষমতায় থাকা যায় না।’’
যে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আদালতের টানাপড়েন চলেছে এবং সেই ‘বিভ্রাট’-এ ভোটের দিন বহু জায়গায় যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি বলেই শাসক দল ‘অবাধে’ ছাপ্পা মেরেছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ, সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে শংসাপত্র দিয়েছেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী কিছুটা হলেও নিরপেক্ষ।’’ অর্থাৎ, রাজ্য পুলিশ ‘নিরপেক্ষ’ নয়। এখন দেখার, বাবুলের এই বক্তব্য সেই ‘আঙ্গিকে’ দেখা হয় কি না।