জল্পনা নিয়ে বাবুল অবশ্য চুপ। ফাইল চিত্র
কলকাতার পরের মেয়র হিসেব কি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা গায়ক-অভিনেতা বাবুল সুপ্রিয়কে দেখা যেতে পারে? এমন জল্পনা ক্রমশ জোরাল হচ্ছে তৃণমূলের অন্দরে। জল্পনা, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিচারে বাবুল কলকাতার মেয়র পদের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, দলের অন্দরে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি মেনে কলকাতার বর্তমান পুর প্রশাসক (মেয়র) তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম যে আর ওই পদে ফিরবেন না, এমন একটি খবর শাসক শিবিরে শোনা যাচ্ছিল। এখন খবর, সেই একই যুক্তিতে দৌড়ে পিছিয়ে গিয়েছএন রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও। সেদিক থেকে বাবুল ওই পদের দাবিদার হতেই পারেন। বিশেষত, যখন বিজেপি থেকে বাবুলকে নিয়ে আসার পর তাঁকে সে ভাবে কোনও পদ দেওয়া হয়নি। একটা সময়ে জল্পনা ছিল, বাবুল রাজ্যের মন্ত্রী হবেন বা রাজ্যসভায় যাবেন। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত উপনির্বাচনে বাবুলকে দাঁড় করায়নি দল। রাজ্যসভার দু’টি খালি আসনেও সুস্মিতা দেব এবং লুইজিনহো ফেলেইরোকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় বাবুল এখনও পর্যন্ত ‘ফাঁকা’ রয়েছেন। তাঁকে সামনে রেখে পুরভোটে লড়লে দল লাভবান হবে বলেই নাকি অভিষেক মনে করছেন। তবে এই খবরের কোনও আনুষ্ঠানিক সত্যতা মেলেনি।
তৃণমূল সূত্রের দাবি, বাবুলের প্রার্থিপদ নিয়ে দলের সর্বময় নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই বাবুলের নাম ঘোষণা করে দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, কলকাতা এবং হাওড়ার ভোট হওয়ার কথা আগামী ১৯ ডিসেম্বর।
ঘটনাচক্রে, আগে কলকাতার কৈলাস বোস স্ট্রিট এলাকার ভোটার হলেও আসানসোলের সাংসদ হওয়ার পরে সেখানকার ভোটার হয়ে যান বাবুল। তবে উত্তর কলকাতার কৈলাস বোস স্ট্রিটে বাবুলের পৈত্রিক বাড়িটি এখনও রয়েছে। যদিও বাবুল সেই ওয়ার্ডের ভোটার হয়ে নির্বাচনে লড়বেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। বরং তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, দক্ষিণ কলকাতার তিনটি ওয়ার্ডের কথা প্রাথমিক ভাবে দল ভেবে রেখেছে। এর মধ্যে একটি ওয়ার্ডে ২০১৫ সালে জয় পেয়েছিল বাবুলের পুরনো দল বিজেপি।
বাবুল ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে চিত্তরঞ্জন দাশ থেকে সুভাষচন্দ্র বসু কলকাতার প্রথম নাগরিক হয়েছেন। সেই পদে বসার সুযোগ পেলে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুলের পক্ষে তা গর্বেরই হবে। যদিও তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, বাবুল সবেমাত্রই (গত ১৮ সেপ্টেম্বর) বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এখনই তাঁকে কলকাতার মেয়রের মতো ‘ওজনদার’ পদে মনোনয়ন দিলে দলের নীচুতলার কর্মীরা তা ভাল ভাবে নেবেন কি না। বিশেষত, তার কয়েক মাস আগেই বাবুল যখন টালিগঞ্জে দাঁড়িয়ে বিধানসভা ভোটে হেরে গিয়েছেন।
তবে দলের অন্য একাংশ মনে করছে, ভোট হবে তৃণমূলের প্রতীকে। বাবুল সেই ভোটে লড়বেন মমতা এবং অভিষেকের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে। তা-ই দলের কর্মীদের তাঁকে মেনে নেওয়ার বিষয়ে কোনও আপত্তি থাকবে না।
মমতা তৃণমূলের শেষ কথা হলেও ইদানীং দলে অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন অভিষেক। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বিধানসভা নির্বাচনের পরে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। তাঁর ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরেই তৃণমূলে যোগ দেন বাবুল। বিধানসভা নির্বাচনের পরে মুকুল রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্তেরা তৃণমূলে ফিরেছেন। কিন্তু বাবুলের যোগদান তাতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে। কারণ, বাবুল রাজনীতি শুরুই করেছিলেন বিজেপি-তে। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন ছিলেন। বাবুলকে তৃণমূলে এনে বিজেপি-কে বড় ধাক্কা দিয়েছিলেন অভিষেক। এখন বাবুলকে কলকাতার মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে সামনে রেখে তৃণমূল লড়াইয়ে নামলে তা বাবুল এবং তৃণমূল— উভয়ের কাছেই সেটা ‘গ্রহণযোগ্য’ হবে।
কলকাতার ১৪৪টি এবং হাওড়ার ৫০ টি ওয়ার্ডে একইদিনে ভোট হওয়ার কথা। গঙ্গার দু’পারের দুই শহরের এই নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে অভিষেকের বড় ভূমিকা থাকবে বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। ঘটনাচক্রে, সদ্যপ্রয়াত কলকাতার প্রাক্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং তার পরে শোভন চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম মেয়র পদপ্রার্থী হয়েছিলেন মমতার পছন্দে। বাবুল সেই পদে মনোনীত হলে তাতে অভিষেকের বড় ভূমিকা থাকবে বলেই জানাচ্ছে তৃণমূলের একাধিক সূত্র।