শুরু হয়ে গিয়েছে উৎপাদন। গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ
জঙ্গলমহলের মহুয়ার গন্ধ মেশানো বাংলা মদ ‘মহুল’। নতুন এই ব্র্যান্ডের বাংলা মদের ৩০০ মিলিলিটার বোতলের দাম ২৮ টাকা। আশা করা হচ্ছে, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এই শীতেই রাজ্যে এই মদ পাওয়া যাবে। শুধু দাম কম নয়, মানেও নাকি মদ্যপায়ীদের কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে ‘মহুল’। এমনটাই আশা করছে রাজ্যের আবগারি দফতর। জানা গিয়েছে, উৎপাদন শুরুর পাশাপাশি কোথাও কোথাও ডিলারদের কাছেও পৌঁছে গিয়েছে নতুন ব্র্যান্ডের দিশি মদ।
রাজ্যে চোলাই মদের বেআইনি বিক্রি বন্ধ করার জন্য অনেক আগে থেকেই সস্তায় দিশি মদ বিক্রি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবে রাজ্য সরকার। এক বছর আগে ২০২০ সালের শীতে পাউচ প্যাকে মহুয়া-গন্ধি বাংলা মদ আনার পরিকল্পনা ছিল। তখন ঠিক হয়েছিল, পাউচ প্যাকে ২০ টাকায় বিক্রি হবে বাংলা মদ। কিন্তু এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় এবং কলকাতা হাই কোর্টে একটি মামলা হওয়ায় বাংলা তৈরির দরপত্র ডেকে উৎপাদক বাছাই পর্ব শুরুর পরেও তা স্থগিত রাখা হয়।
আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন ওই মদ তৈরি শুরু হয়েছে। যারা তৈরি করছে, তার মধ্যে অন্যতম বীরভূমের আহমেদপুরের এসকেডি নামে এক সংস্থা। ৭০ ডিগ্রির এই দিশি মদে অ্যালকোহলের পরিমাণ থাকবে ১৭.১ শতাংশ।
চোলাইয়ের রমরমা রুখতে অনেক আগে থেকেই নানা পরিকল্পনা করে আবগারি দফতর। তখনই এমন পরামর্শ আসে যে, চোলাইয়ের মতো কম দামে যদি দিশি মদ আনা যায়, তবেই বেআইনি মদের ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব। চোলাই কারবারিদের ঠেকাতে পারলে এক দিকে যেমন রাজ্য সরকারের আয় বাড়বে, তেমন বিষ মদে মৃত্যুর ঝুঁকিও কমবে।
এখন বাজারে, ‘জয়’, ‘উড়ান’, ‘পলাশ’ ইত্যাদি নামে ৬০ ডিগ্রির দিশি মদ পাওয়া যায়। আগে এর ৩০০ মিলিলিটার বোতলের দাম ছিল ৫০ টাকা। এখন দাম বেড়ে খোলা বাজারে ওই বোতল ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু তাতেও চোলাইয়ের ব্যবসা বন্ধ করা যায়নি। কারণ, যে শ্রেণির কাছে চোলাই জনপ্রিয়, তাঁদের আয়ত্তের বাইরে ৬০ ডিগ্রির দিশি মদের দাম। সেই কারণে আরও সস্তায় দিশি মদ আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
এখন যে সব দিশি মদ বিক্রি হয় তার অর্ধেকেরও কম দামে ‘মহুল’ ব্র্যান্ড পাওয়া যাবে বলে জানা গিয়েছে। তবে বাজার চলতি চোলাই মদের চেয়ে অনেকটাই কমা এই ৭০ ডিগ্রির দিশি মদ। তাই গরিব গুর্বো মদ্যপায়ীদের কাছে ‘মহুল’ তেমন জনপ্রিয় হবে কি না, তা নিয়ে আবগারি দফতরের কিছুটা হলেও সন্দেহ রয়েছে। কারণ, এতে চোলাইয়ের মতো নেশা হওয়ার সম্ভাবনা কম। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘দাম আরও কম রাখার জন্য একটা সময় পর্যন্ত ঠিক হয়েছিল পাউচ প্যাকে ২০০ মিলিলিটার মদ ২০ টাকায় বাজারে আনা হবে। কিন্তু সেটা সম্ভব নয় বলেই ২৮ টাকায় ৩০০ মিলিলিটার এবং পাউচের বদলে প্লাস্টিকের বোতলে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকার দিশি মদের গুণগত মান বাড়ানোর দিকে বরাবরই নজর দিয়েছে। ‘দাদা’, ‘দাদাগিরি’, ‘চ্যালেঞ্জ’ ইত্যাদি বিভিন্ন নামে দিশি মদকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা হয়েছে। এর ফলে দিশি মদের বিক্রিও বাড়ে। করোনাকালের আগের হিসেব মতো রাজ্য বছরে ৪০ কোটি বোতল দিশি মদ বিক্রি হয়। কিন্তু গুণমান বাড়াতে গিয়ে দাম ৫০ টাকার উপরে চলে যাওয়ায় বিক্রি গত কয়েক বছরে সে ভাবে বাড়েনি। গরিব মদ্যপায়ীরা তুলনায় দামি দিশি মদ ছেড়ে চোলাইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। এখন চেষ্টা চলছে ২৮ টাকার দিশি মদ বিক্রি করে চোলাইয়ের কারবার যাতে বন্ধ করা যায়। তবে ‘মহুল’ রাজ্যের সর্বত্র পাওয়া যাবে কি না, কিংবা সব ডিলাররাই রাখবেন কি না, সে ব্যাপারে এখনও কিছু জানা যায়নি।