(বাঁ দিক থেকে) বাবুল সুপ্রিয়, অশোক লাহিড়ী, বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বাজেট বক্তৃতায় গায়ক বাবুল সুপ্রিয়কে গানের খোঁচা দিলেন অর্থনীতিবিদ বিধায়ক অশোক লাহিড়ী। শুক্রবার বিধানসভা অধিবেশনে দ্বিতীয়ার্ধে বাজেট বক্তৃতা করতে ওঠেন বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক। বাজেট বক্তৃতা করতে উঠে তিনি বলেন, ‘‘এ বারের বাজেট দেখে আমার হিন্দি সিনেমার একটা গান মনে পড়ে যাচ্ছে। সেটা সিআইডির গান। গানটি লিখেছিলেন মজরুহ সুলতানপুরি। গানের কথা ছিল, কহি পে নিগাহে, কহি পে নিশানা।’’ এর পরেই নিজের বক্তৃতা শুরু করেন তিনি। বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকেই তাঁর সঙ্গে অল্পবিস্তর কথাবার্তা চলছিল তৃণমূল বিধায়কদের। একসময় কিছু মন্তব্য করেন ট্রেজারি বেঞ্চে থাকা মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর মন্তব্য শোনা মাত্রই বাবুলকে উদ্দেশ্য করে বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘‘আপনার গান শুনতে আমি ভালবাসি। আপনি গান ভাল বোঝেন। গান নিয়ে কথা বলুন।’’ তাঁর এমন মন্তব্য শুনে ক্ষেপে যান বাবুল। উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করেন তিনি। অর্থনীতিবিদ বিধায়ককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আপনি অর্থনীতি বোঝেন আপনি অর্থনীতির কথা বলুন আপনি কেন আমাকে আক্রমণ করছেন?’’
অধিবেশন মৃদু উত্তপ্ত হলে নিজের আসন থেকে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বালিগঞ্জের বিধায়ককে বলেন, ‘‘কথা থামিয়ে তুমি নিজের জায়গায় বসো।’’ অরূপের কথায় কর্ণপাত না করে স্পিকারের উদ্দেশ্যে বাবুল বলেন, ‘‘আমাকে বলার সুযোগ করে দিতে হবে।’’ স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বাবুলকে বলেন, ‘‘এ ভাবে কাউকে বলতে দেওয়া যায় না। বালুরঘাটের বিধায়ক বক্তৃতা করছেন, তাঁকে বক্তৃতা শেষ করতে দিন।’’ স্পিকারের কথায় কর্ণপাত না করে তিনি জবাবি বক্তৃতা করবেন বলে অনড় থাকেন। এ বার নিজের আসন ছেড়ে উঠে এসে বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ নির্দেশ দেন, ‘‘বাবুল নিজের আসনে বসো।’’ বাবুল সেই নির্দেশে পাত্তা না দিলে, অরূপ বলেন যদি কিছু বলার থাকে নির্মলদার (তৃণমূল পরিষদীয় দলের মুখ্যসচেতক) থেকে সময় চেয়ে নাও।’’ সেই সময় স্পিকার ও অরূপের নির্দেশে নিজের আসনে বসে যেতে বাধ্য হন বাবুল। স্পিকার বিজেপি বিধায়ককে তাঁর বক্তৃতা শেষ করতে নির্দেশ দেন।
অর্থনীতিবিদ অশোকের বক্তৃতা শেষ হলে মজার ছলে স্পিকার তাঁকে বলেন, ‘‘আপনি যে সিআইডি ছবির গানের কথা বলেছেন সেই ছবির গান আমারও শুনতে ভাল লাগত। অনেক পুরনো দিনের গান, সে গান না হয় একদিন শোনা যাবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আপনি তো বললেন বাবুলের গান শুনতে আপনি খুব ভালবাসেন। তাই আমরা একদিন সেই ছবির গান বাবুলের গলাতেই শুনব।’’ প্রত্যুত্তরে বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘‘তা হলে সেই গান আমি, আপনি ও বাবুল আপনার ঘরে বসেই শুনব।’’ এর পর দু’জনেই হেসে বিধানসভার সাময়িক উত্তপ্ত পরিবেশকে শান্ত করে দেন। কিন্তু এর কিছু পরে ক্ষুব্ধ বাবুল তৃণমূল পরিষদীয় দলের মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষের কাছে যান। দাবি জানান, বক্তার তালিকায় তাঁকে শামিল করে অশোককে জবাব দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কিন্তু পরিষদীয় নিয়মে তার দাবি মানা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন নির্মল।