একজোট: আয়েশা রেনা (বাঁ দিকে) এবং দেবস্মিতা চৌধুরী। শুক্রবার জ়াকারিয়া স্ট্রিটের প্রতিবাদ মঞ্চে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
মুখে হাসি লেগেই আছে। কে বলবে, এই মেয়ে জামিয়া চত্বরে প্রতিবাদী বন্ধুকে বাঁচাতে, আঙুল তুলে এক দল পুলিশের উদ্যত লাঠি থামিয়ে দিয়েছিলেন!
কে-ই বা বলবে, এই মেয়ে যাদবপুরের সমাবর্তন মঞ্চে পদক নেওয়ার পরে সংযত প্রতিবাদে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি!
জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়েশা রেনা এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবস্মিতা চৌধুরী।
পার্ক সার্কাসে যখন চলছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের রাত জাগা, শুক্রবার জ়াকারিয়া স্ট্রিটের এক সভায় দুই কন্যা একযোগে বললেন, ‘‘সিএএ নেহি চলেগা। এনআরসি নেহি চলেগা।’’ যা শুনে চার পাশে হাততালির গর্জন আর ‘হাল্লা বোল’!
আরও পড়ুন: ঐশীরা অভিযুক্ত, কিন্তু মুখোশধারীরা? দিল্লি পুলিশের ভূমিকায় বিতর্ক
আয়েশা-দেবস্মিতা মঞ্চে ওঠার পরেই হাততালিতে ফেটে পড়েছিল সভা। রাস্তায় বাঁধা মঞ্চ ঘিরে প্রায় সকলের মোবাইল ক্যামেরাই ব্যস্ত দুই কন্যার ছবি ধরে রাখতে। হুড়োহুড়িও পড়ে গেল দুই সুহাসিনীর সঙ্গে নিজস্বী তোলার জন্য।
বৃহস্পতিবার রাতে পার্ক সার্কাসে সংশোধিত নাগরিক আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অবস্থানে যোগ দিয়েছিলেন আয়েশা। ছিলেন এ দিন দুপুরে মেয়ো রোডে গাঁধী-মূর্তির পাদদেশে প্রতিবাদ সভাতেও। তার পরে রাতের সভায় তাঁর উচ্ছ্বাস, এ শহরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ তাঁকে আরও উৎসাহিত করছে। নতুন দিন আসবেই। আয়েশার কথায়, ‘‘প্রতিবাদে থাকুন। প্রতিবাদ থেকে সরবেন না।’’ ভীম পার্টির নেতা চন্দ্রশেখর
আজাদের মুক্তির দাবির পাশাপাশি জানালেন নতুন নাগরিক আইন নিঃশর্ত প্রত্যাহারের দাবি। আর তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে দেবস্মিতা বললেন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জনপ্রিয় বাক্যটি, যা তিনি বলেছিলেন সে-দিনের মঞ্চেও— ‘‘হাম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে।’’ বললেন, পুলিশের লাঠির সামনে আঙুল উঁচিয়ে আয়েশার রুখে দাঁড়ানো ছিল ‘অনেক বেশি কঠিন কাজ’। আর যখন বললেন, ‘‘স্বাধীনতার আন্দোলনের পরে এত বড় প্রতিবাদ এ দেশে ঘটেনি। এই আন্দোলন চালিয়ে যেতেই হবে,’’ হাততালি তখন গর্জন।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ডাকা এই সভায় ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, জেএনইউয়ের পড়ুয়ারাও। সভামঞ্চেই স্লোগান ওঠে— ‘‘মোদী, গো ব্যাক।’’ উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে ফ্যাশন ডিজ়াইনার এবং সিএএ-প্রতিবাদী কায়নাত কামাল তখন বলছেন, ‘‘এই উদ্দীপনা দেখে মনে হয়, ভারত জাগছে। আর সেটা ঘটছে মেয়েদেরই হাত ধরে।’’