নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অয়ন শীল। ফাইল চিত্র।
বছর দুয়েক আগে একটি সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেল করার পরিকল্পনা করেছিলেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অয়ন শীল। বেশ কয়েক জনের সঙ্গে বৈঠক করা থেকে কোথায় কত বিনিয়োগ করতে হবে, তার ছক কষা— তিনি কয়েক ধাপ এগিয়েওছিলেন সেই লক্ষ্যে। এমনটাই খবর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রে।
তদন্তকারীদের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শনি থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সল্টলেকে অয়নের ভাড়াবাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে হরেক কিসিমের নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে। তা থেকেই ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ এই প্রোমোটারের টিভি চ্যানেল করার পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের ওই সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে একটি সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেল শুরু করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন অয়ন। তার জন্য কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পরিকল্পনাও ছিল তাঁর। সেই অঙ্কটা প্রায় ১০০ কোটির কাছাকাছি! এমনটাই জানা গিয়েছে তদন্তকারীদের ওই সূত্রে।
ইডির ওই সূত্রে জানা গিয়েছে, অয়নের সল্টলেকের অফিস থেকে বেশ কয়েকটি নাম সম্বলিত আইনি বিষয় সংক্রান্ত নথি উদ্ধার হয়েছে। সেই নথি থেকেই অয়নের পরিকল্পনার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। নথিতে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের সঙ্গে চ্যানেল শুরু করার প্রাথমিক কাজকর্ম করছিলেন অয়ন। টিভি চ্যানেল শুরু করতে কী কী করতে হবে, কোথা থেকে কী অনুমোদন নেওয়া আবশ্যক, সেই ব্যাপারেও তিনি পরামর্শ নিচ্ছিলেন। ইডি সূত্রেরই দাবি, দিল্লিতে এই বিষয়টি নিয়ে বৈঠকও করেছিলেন অয়ন। সেই বৈঠকে এক সাংবাদিক ছাড়াও দিল্লি ও কলকাতার বেশ কয়েক জন হাজির ছিলেন বলে তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে।
অয়ন পরামর্শ নিয়েছিলেন, এমন এক জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তিও বলেন, ‘‘চ্যানেল খোলার ব্যাপারে ওই সময় অনেকের কাছ থেকেই পরামর্শ নিয়েছিলেন অয়ন শীল।’’ তিনি কি ইডি-কে তদন্তে সাহায্য করতে প্রস্তুত? তার জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি যতটুকু জানি, জানতে চাওয়া হলে জানিয়ে দেব।’’
বিভিন্ন সূত্রে খবর মিলেছে, চ্যানেল চালু করার ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেই মাঠে নামতে চাইছিলেন অয়ন। চ্যানেলের আর্থিক বিষয়টি নিজে দেখবেন বলেও জানিয়েছিলেন ঘনিষ্ঠমহলে। অর্থ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নিয়েছিলেন। যন্ত্রাংশ কেনার কথাও ভাবা হয়ে গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে প্রথম পর্যায়ের যন্ত্রাংশ কেনার জন্য ৮-১০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথাও ভেবেছিলেন অয়ন।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য চ্যানেল শুরু করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে ইডি আধিকারিকদের একাংশের মত, ‘নিয়োগ দুর্নীতি’ থেকে উপার্জিত কালো টাকা সাদা করতেই চ্যানেলের পরিকল্পনা করে থাকতে পারেন অয়ন। তাঁদের যুক্তি, কালো টাকা সাদা করতে নানা পন্থা অবলম্বন করা হয়ে থাকে। কেউ ‘শেল কোম্পানি’ খুলে কালো টাকা সাদা করেন। কেউ আবার অসৎ পথে উপার্জিত টাকা নানা জায়গায় বিনিয়োগ করে দেন। এ ক্ষেত্রে অয়ন দ্বিতীয় কৌশল নিয়ে থাকতে পারেন।
ইডি সূত্রে আগেই জানা গিয়েছে, টালিগঞ্জে বিনোদন শিল্পেও অয়নের টাকা বিনিয়োগের নথি মিলেছে। তদন্তকারীদের সন্দেহ, নিয়োগে ‘দুর্নীতি’ করে পাওয়া টাকাই চলচ্চিত্র প্রযোজনায় বিনিয়োগ করা হয়ে থাকতে পারে। অয়নের চলচ্চিত্র প্রযোজনায় বিনিয়োগের সূত্রে শ্বেতা চক্রবর্তীর নাম জড়িয়েছে। শ্বেতাও আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, অয়নের প্রযোজনায় ‘কাবাড্ডি কাবাড্ডি’ সিনেমায় তিনি কাজ করেছেন। কিন্তু কোনও পারিশ্রমিক নেননি। সিনেমাপাড়ায় অয়নের কোটি কোটি টাকা ঢালা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই এ বার তাঁর চ্যানেল তৈরির পরিকল্পনার কথাও জানতে পারলেন তদন্তকারীরা।