অভীক দে। — ফাইল চিত্র।
মেডিক্যাল কলেজে ‘দাদাগিরি’তে অভিযুক্ত চিকিৎসক অভীক দে-র বিরুদ্ধে এ বার কড়া পদক্ষেপ করল এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের নির্দেশ, এসএসকেএম হাসপাতালে আর কোনও কাজ করতে পারবেন না অভীক। বহির্বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার (ওটি), এমনকি জরুরি বিভাগেও আর কোনও ডিউটি করতে পারবেন না তিনি। হস্টেলে ঘরও পাবেন না। সোমবার কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক হয়। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার এই নিয়ে নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
অভীককে স্বাস্থ্য দফতর সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করেছে আগেই । এ বার অভীককে সাসপেন্ড করল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। অভীকের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে ‘দাদিগিরি’তে অভিযুক্ত চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাস এবং চিকিৎসক সুশান্ত রায়কেও সাসপেন্ড করেছে আইএমএ।
অভীকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, হাওড়ায় আইএমএর রাজ্য শাখার ৭৫তম বার্ষিক সম্মেলনে তিনি ভাঙচুর চালিয়েছিলেন। সেই নিয়ে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিস পাঠানো হয়েছিল ওই চিকিৎসককে। সোমবার আইএমএর রাজ্য শাখা জানিয়েছে, অভীক যে কারণ দেখিয়েছেন, তাতে তারা সন্তুষ্ট নয়। আরও বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর নাম জড়িয়েছে। তা ছাড়া স্বাস্থ্য ভবনও তাঁকে সাসপেন্ড করেছে। এই আবহে তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইএমএ-র রাজ্য শাখা। একই অভিযোগে বিরুপাক্ষকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে।
চিকিৎসক সুশান্তের বিরুদ্ধে সম্মেলনে ভাঙচুরের পাশাপাশি আরজি কর হাসপাতালে তাঁর উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাঁকে সাসপেন্ড করে আইএমএর রাজ্য শাখা চিঠিতে জানিয়েছে, আরজি কর-কাণ্ডে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থারও নজরে রয়েছেন সুশান্ত। অভিযোগ উঠেছে, তিনি প্রমাণ লোপাটে সাহায্য করেছেন। সারা দেশে যখন নির্যাতিতার বিচার চেয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন আইএমএর সদস্যেরা, তখন সুশান্ত তা থেকে দূরে থেকেছেন। যাঁরা শামিল হতে চেয়েছেন, তাঁদের হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। এই আবহে সুশান্তকেও সাসপেন্ড করেছে আইএমএ-র রাজ্য শাখা।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে এক চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ উঠেছে। সেই আবহে হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতি-সহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। হাই কোর্টের নির্দেশে সেই নিয়ে তদন্তে নেমেছে সিবিআই। রাজ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে নাম জড়িয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজেরও। অভিযোগ, এই ‘বর্ধমান শাখা’ সিন্ডিকেটের মাথায় ছিলেন এসএসকেএমের চিকিৎসক-পড়ুয়া অভীক। তিনি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের আরএমও ছিলেন। চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পরে আরজি করের সেমিনার রুমে তাঁর উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল নানা মহলে। ওই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত না-হয়েও তিনি সেখানে কী করছিলেন, সেই প্রশ্ন ওঠে। এমনকি, অভীকের এসএসকেএমে পিজিটি পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল একাধিক চিকিৎসক সংগঠন। এই আবহে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সাসপেন্ড করে তাদের সদস্য অভীককে। তাদের তরফে এ-ও জানানো হয়েছিল, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে আর প্রবেশ করতে পারবেন না অভীক, যত দিন পর্যন্ত না তদন্ত শেষ হচ্ছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর অভীক এবং বিরুপাক্ষকে সাসপেন্ড করে স্বাস্থ্য ভবন। এ বার তাঁদের সাসপেন্ড করল আইএমএ। পাশাপাশি, অভীককে কাজ করতে বারণ করল এসএসকেএম।