MI vs LSG in IPL 2025

নিজের দলেই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন ২৭ কোটির পন্থ? প্রশ্ন তুলে দিল রবিবারের ম্যাচ, মুম্বইয়ের কাছে হার লখনউয়ের

প্রথম বলে চার। দ্বিতীয় বলে রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে আউট। দলকে যেখানে দুশোর উপর রান তাড়া করে জিততে হবে, সেখানে এটাই ছিল শনিবার ঋষভ পন্থের অবদান। হেরেও গেল লখনউ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:২৫
Share:
cricket

ঋষভ পন্থ। ছবি: পিটিআই।

প্রথম বলে চার। দ্বিতীয় বলে রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে আউট। দলকে যেখানে দুশোর উপর রান তাড়া করে জিততে হবে, সেখানে এটাই ছিল শনিবার ঋষভ পন্থের অবদান। ফেরার পর কেউ সমবেদনাটুকু জানালেন না তাঁকে। প্রশ্ন উঠে গেল, একের পর এক দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে আউট হওয়া পন্থের পাশে কি তাঁর দলেরই আর কেউ নেই? শনিবার ঘরের মাঠে লখনউকে হারিয়ে দিল মুম্বই। আগে ব্যাট করে মুম্বইয়ের তোলা ২১৫/৭-এর জবাবে লখনউ থেমে গেল ১৬১ রানে।

Advertisement

কর্ণ শর্মার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরার সময় পন্থের হাঁটা দেখেই মনে হচ্ছিল, সাজঘরে ফেরার রাস্তা কতটা লম্বা। কোনও মতে শরীরটাকে টেনে গিয়ে বাউন্ডারির সীমান্ত পেরোলেন। ব্যাট একটি জায়গায় রেখে ফাঁকা আসনে ধপ করে বসে পড়লেন। মুখে শূন্য দৃষ্টি। একটু দূরে বসা মেন্টর জাস্টিন ল্যাঙ্গারের মুখ থমথমে। পন্থের পাশের চেয়ারে বসেছিলেন জাহির খান। তিনি এক বার পন্থের হাঁটুতে হালকা চাপড় মেরে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। পন্থের মুখের ভঙ্গিমা বদলাল না। একটু বাদে বিজয় দাহিয়ার সঙ্গে হেসে কথা বললেন। মনেই হচ্ছিল, জোর করে হাসছেন। পন্থ ফেরার পর কোনও সতীর্থকে এসে সান্ত্বনা দিতে দেখা গেল না।

তবে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে পন্থের খেলার ধরন। সপ্তম ওভারে নিকোলাস পুরান আউট হওয়ার পর তিনি যখন নামলেন তখন দলের রান ৬০/২। জয়ের থেকে ১৫৬ রান দূরে। এই অবস্থায় যে কোনও অধিনায়কই চাইবেন ঠান্ডা মাথায় খেলে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। আর কেউ যদি কাঁধে ২৭ কোটি টাকার বোঝা নিয়ে খেলতে নামেন, তা হলে জেতানোর দায় তো আরও বেশি থাকে।

Advertisement

পন্থের শুরুটাই ছিল নড়বড়ে। উইল জ্যাকসের বলটা ছিল অফস্টাম্পের বাইরে। পন্থ কাট করতে গিয়েছিলেন। বল ব্যাটের কানার লেগে স্লিপ অঞ্চল দিয়ে চার হয়ে যায়। স্লিপ থাকলে ক্যাচ হত না এ কথা বলা যায় না। প্রাণে বাঁচলে পরের বলে সতর্ক হয়ে খেলাই বাঞ্ছনীয়। তবে পন্থ কোনও দিনই সে সবের ধারেকাছে নেই। দ্বিতীয় বলে জ্যাকসকে রিভার্স সুইপ মারতে যান। পন্থের রিভার্স সুইপ মারার প্রবণতার কথা ভেবেই শর্ট থার্ডম্যানে কর্ণ শর্মাকে রেখেছিলেন হার্দিক পাণ্ড্য। সেই কর্ণের হাতে লোপ্পা ক্যাচ তুলে দেন পন্থ।

এর আগে রাজস্থান ম্যাচেও একই কায়দায় শট মারতে গিয়ে উইকেট খুইয়েছিলেন। তবু যে ভুল থেকে শিক্ষা নেননি, তার প্রমাণ মুম্বই ম্যাচ। শুধু তা-ই নয়, প্রশ্ন উঠছে তাঁর সাহসী শট খেলার সময় নিয়ে। দল যেখানে জয়ের থেকে অনেক দূরে, সেখানে দ্বিতীয় বলে কী ভাবে রিভার্স সুইপ খেলতে পারেন? সেই শট, যেটায় তিনি বার বার আউট হচ্ছেন। ফর্মে ফেরা এবং নায়ক হওয়ার জন্য এর চেয়ে ভাল মঞ্চ তাঁর কাছে ছিল না। ২৭ কোটির দাম নিয়ে যাঁরা সমালোচনা করেন তাঁদের মুখের উপর জবাবও দেওয়া যেত। পন্থ আবার সেই সুযোগ হেলায় হারালেন। বার বার যে ভাবে হারাচ্ছেন সে ভাবেই।

চলতি আইপিএলে ১০ ইনিংস খেলে পন্থের রান মোটে ১১২। ইনিংসগুলোকে পর পর সাজালে দেখাবে এ রকম— ০, ১৫, ২, ২, ২১, ৬৩, ২, ৩, ০ এবং ৪। খেলেছেন ১১৮টি বল। চেন্নাই ম্যাচ বাদে বলার মতো রান কোনওটিতেই নেই। হায়দরাবাদের কাছে ১০ উইকেটে হারার পর কেএল রাহুলকে যদি প্রকাশ্যে ও ভাবে বকাঝকা করতে পারেন সঞ্জীব গোয়েন্‌কা, তা হলে পন্থের পারফরম্যান্স নিয়ে কী বলবেন তিনি?

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর প্রথম উইকেটরক্ষক হিসাবে পন্থের নাম উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু পরে কোচ গম্ভীর জানান উইকেটরক্ষক হিসাবে খেলাবেন রাহুলকে। অস্ট্রেলিয়া সফরে পন্থের বেহিসাবি ব্যাটিংয়ে বিরক্ত ছিলেন গম্ভীর। বার বার বুঝিয়েও লাভ হয়নি। লাল বলের ক্রিকেটে অবাধ্যতার প্রভাব চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পড়তে পারে, সম্ভবত বোঝেননি পন্থ।

তবে বুঝতে পারার মতো পরিণত এত দিনে হয়ে যাওয়া উচিত ছিল তাঁর। দলগত খেলায় নিজের মতো খেলার স্বাধীনতা থাকলেও যেমন খুশি খেলার স্বেচ্ছাচারিতা গ্রহণযোগ্য নয়। কোনও খেলোয়াড়ের একগুঁয়ে মানসিকতার খেসারত দিয়ে দিনের পর দিন দলের ক্ষতি মেনে নেওয়া যায় না। দলীয় এই শৃঙ্খলার বাইরে নন পন্থও। প্রতিভা থাকলেই হয় না। একটা সময়ের পর দায়িত্ববোধও প্রয়োজন। গম্ভীরের মতো কড়া ধাঁচের কোচ অন্তত প্রতিভার অপব্যবহার মেনে নেবেন না।

এ বারের আইপিএল ছিল পন্থের কাছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে ফেরার চ্যালেঞ্জও। তিনি কেমন খেলছেন, তার উপরেই নির্ভর করবে যে বিশ্বকাপের দলে তিনি জায়গা পাবেন কি না। তবে এখনও পর্যন্ত পন্থের পারফরম্যান্সে বলা যায়, বিশ্বকাপের রাস্তায় ছড়ানো বহু কাঁটা। আর সেই কাঁটাগুলি অন্য কেউ নয়, পন্থ নিজেই বিছিয়ে রেখেছেন। কণ্টকাকীর্ণ সেই রাস্তার উপর দিয়েই এখন হেঁটে যেতে হবে।

পন্থের যা-ই হোক না কেন, আইপিএলে আবার অপ্রতিরোধ্য দেখাচ্ছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে। টানা পাঁচটি ম্যাচে জিতল তারা। এ দিন টসে জিতে লখনউয়ের আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়েছে। দুপুরে খেলা হওয়ায় শিশিরের সাহায্য পাওয়া অসম্ভব ছিল। তবু পন্থ আগে বোলিং নিলেন। রায়ান রিকেলটন (৩২ বলে ৫৮) এবং সূর্যকুমার যাদবের (২৮ বলে ৫৪) মুম্বই তোলে ২১৫/৭। জবাবে লখনউ শেষ ১৬১ রানেই। আয়ুষ বাদোনি (৩৫) এবং মিচেল মার্শ (৩৪) ছাড়া কেউ বলার মতো রান করতে পারেননি। জসপ্রীত বুমরাহ ২২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। চলতি আইপিএলে এ দিনই প্রথম বার খেললেন মায়াঙ্ক যাদব। চার ওভারে ৪০ রান দিয়ে তাঁর প্রাপ্তি মাত্র ২ উইকেট। মায়াঙ্কের বলের গতি কমেছে। তেমনই রানও হজম করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement