Burdwan Medical College And Hospital

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ক্যান্টিন দখল করেছিলেন অভীক! মালিককে তাড়ান হুমকি দিয়ে, অভিযোগ

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ গ্রেফতার হতেই আলোচনায় উঠে এসেছে অভীক দে-র নাম। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন আরএমও অভীককে ঘিরে উঠতে শুরু করে একের পর এক অভিযোগ। সেই আবহেই এ বার ক্যান্টিন বিতর্কে নাম জড়াল অভীকের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৫৪
Share:

অভীক দে। —ফাইল ছবি।

গভীর রাতে আচমকাই ক্যান্টিনে হামলা চালিয়েছিলেন কয়েক জন। হামলাকারীদের নেতৃত্বে ছিলেন অভীক দে। ক্যান্টিন খালি করার জন্য রীতিমতো হুমকি দেওয়া হয়। এমনই অভিযোগ করলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ক্যান্টিনের মালিক কার্তিক ঘোষ!

Advertisement

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ গ্রেফতার হতেই আলোচনায় উঠে এসেছে অভীকের নাম। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন আরএমও তথা ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র উঠতি নেতা অভীককে ঘিরে উঠতে শুরু করে একের পর এক অভিযোগ। হাসপাতালে তাঁর ‘দাদাগিরি’র কীর্তি নিয়ে মুখ খুলছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সেই আবহেই এ বার ক্যান্টিন বিতর্কে নাম জড়াল অভীকের।

২০০৯ সাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে হাউস স্টাফ ক্যান্টিন চালাচ্ছেন কার্তিক। ২০১৯ সালে সেই ক্যান্টিন ভাঙা পড়ে। ওই সময়ে চিকিৎসকেরা তাঁকে পিজি ক্যান্টিনের দ্বায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কার্তিক জানান, সরকারি নিয়ম মেনেই ২০১৯ সালে পিজি ক্যান্টিন চালাচ্ছিলেন তিনি। দু’টি ঘর নিয়ে ওই পিজি ক্যান্টিন চালাতেন কার্তিক। একটি ছিল মেয়েদের জন্য বরাদ্দ, অন্যটি ছেলেদের। সারা দিনের পাশাপাশি রাতেও তাঁর ক্যান্টিন খোলা থাকত। অভিযোগ, গত বছর এক দিন গভীর রাতে পিজি ক্যান্টিনে ঢুকে তাঁকে হুমকি দেন অভীক। শুধু তা-ই নয়, ওই ক্যান্টিন ছাড়তে ‘ফরমান’ জারি করেন তিনি। কার্তিকের কথায়, ‘‘অভীকদের হুমকির মুখে প্রথমে আমি কোনও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি। পরে জুনিয়র ডাক্তারদের জানাই বিষয়টা। কিন্তু অভীক এতটাই প্রভাবশালী যে, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও চিকিৎসকই সাহস দেখাতে পারেননি।’’

Advertisement

ওই ক্যান্টিনের দায়িত্ব এক পঞ্জাবি যুবককে দিয়েছিলেন অভীক। সেই নতুন ক্যান্টিনের জন্য রাতারাতি লরি করে চলে এসেছিল মালপত্র। কিন্তু সেই ক্যান্টিন ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি, দাবি কার্তিকের। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে কার্যত ক্যান্টিন থেকে উচ্ছেদ করেন অভীক। কার্তিকের দাবি, এই ‘গুন্ডামি’র কাছে মাথা নত করেননি তিনি। ক্যান্টিনের দাবিতে জেদ ধরেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এক কোনায় তাঁকে ক্যান্টিন চালানোর ব্যবস্থা করে দেন অভীকেরা। কার্তিকের অভিযোগ, ওই পঞ্জাবি যুবক কোমরে রিভলভার নিয়ে ক্যান্টিনে বসতেন!

আরজিকর-কাণ্ডে অভীকের নাম জড়িয়ে যাওয়ার পর রাতারাতি ওই ক্যান্টিনের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। মাসখানেক ক্যান্টিনের গেটে তালা ঝুলছে। নাম সামনে আসতেই রাতারাতি ক্যান্টিনের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৩ সাল থেকে ওই ক্যান্টিনের পাশে একটি ফোটোকপি যন্ত্র বসিয়েছিলেন অভীকেরা। রমরমিয়ে চলত সেই দোকানও। কিন্তু ‘বেআইনি’ ওই দোকানেরও এখন ঝাঁপ বন্ধ।

বিতর্কে জড়ানোর পরেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে আসা বন্ধ অভীকের। বৃহস্পতিবার তাঁকে সাসপেন্ড করেছে স্বাস্থ্য দফতর। আগেই তাঁকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদও। চিকিৎসক মহলের একাংশের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ থেকে জেলা স্তরের হাসপাতালে এমন ভাবেই পুরো সিন্ডিকেট পরিচালনা করতেন অভীকেরা। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলও তাঁকে সাসপেন্ড করে। কিন্তু তার পরেও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের ক্যান্টিন কমিটিতে জ্বলজ্বল করছে অভীকের নাম। তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সেই বিতর্কের মুখে পড়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অভীককে এই হাসপাতালের রেডিলজি বিভাগের আরএমও করা হয়। সেই কারণেই ক্যান্টিন কমিটির ওয়েবসাইটে তাঁর নাম রয়েছে। সোমবার অভীকের নাম ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান মৌসুমী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement