গঙ্গাসাগর মেলা
তাঁদের তৈরি সামগ্রী কখনও দৈনন্দিন ক্ষেত্রে, কখনও ঘরের সাজসজ্জায়, অনেক সময় সরকারি অনুষ্ঠানেও ব্যবহৃত হয়। এ বার সেই তালিকায় নাম উঠতে চলেছে তীর্থযাত্রীদের। গঙ্গাসাগরের পুণ্যার্থীদের জন্য পাটের ব্যাগ তৈরি করছেন বন্দিরা।
সাগরমেলা প্রাঙ্গণকে প্লাস্টিক-মুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীন গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বেই এই পদক্ষেপ। ৭ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে মেলা। সপ্তাহ দুয়েক আগে সাগরে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ ২৪ পরগনার বইমেলাও ছিল প্লাস্টিক-শূন্য।
এই অবস্থায় গঙ্গাসাগর মেলাকে প্লাস্টিক-মুক্ত করতে হলে অন্য উপাদানে তৈরি ব্যাগ-সহ নানান সামগ্রীর জোগান প্রয়োজন। সেই জোগানের একটা বড় অংশ আসবে বন্দিদের হাত থেকে। দমদম ও প্রেসিডেন্সি সেন্ট্রাল জেলে পাটজাত সামগ্রী তৈরি করেন বন্দিরা। তার মধ্যে ব্যাগও রয়েছে। সেই ব্যাগই এ বার পাঠানো হবে সাগরমেলায়। পর্যাপ্ত ব্যাগ তৈরির কাজ চলছে। এই কাজে কারা দফতরে সহযোগী হিসেবে রয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তারাই বন্দিদের এই কাজে প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে পাটজাত সামগ্রীর বিপণনের কাজ করে থাকে। সেই সংস্থার ম্যানেজিং ট্রাস্টি চৈতালি দাস বলেন, ‘‘পরিবেশের স্বার্থে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের কথা বার বার উঠছে। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলাকে প্লাস্টিক-মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরাও মেলাকে প্লাস্টিক-শূন্য করতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছি।’’
বন্দিদের তৈরি প্রায় ২০ হাজার পাটের ব্যাগ গঙ্গাসাগরে পাঠানোর লক্ষ্য নিয়েছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দমদম জেলের ৪০ জন বন্দি এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। প্রেসিডেন্সি জেলের ২০ জন বন্দিও পাটের সামগ্রী তৈরি করছেন। কিন্তু ওই ৬০ জনের পক্ষে সাগরমেলার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে বিপুল সংখ্যক তৈরি করা খুব কঠিন। তাই আরও বেশি বন্দিকে এই কাজে লাগানোর জন্য কারা
দফতরের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান চৈতালি। প্রয়োজনে দমদম জেলে থাকা পাটজাত সামগ্রী তৈরির পরিকাঠামোতেও হেরফের করা হতে পারে। সময়ে এই কাজ শেষ করাটাই ওই সংস্থার কাছে এখন
পাখির চোখ।
পাটের ব্যাগের পাশাপাশি এ বার সাগরমেলায় বাঁশপাতার ব্যাগ-ঠোঙাও থাকছে। সেই সঙ্গে কিছু জিনিস থাকছে, যা প্লাস্টিকের মতো দেখতে, তবে মাটিতে দিলে কয়েক মাসের মধ্যে মিশে যায়। সেই পচনশীল দ্রব্য দিয়ে তৈরি চায়ের কাপ, গ্লাস, চামচ, স্ট্র-সহ নানান সামগ্রী থাকবে। ভুট্টার খোলা দিয়ে তৈরি ব্যাগও থাকবে, যা পলিথিনের মতো দেখতে।