দীর্ঘ দেড় বছর পরে স্কুল খুলল।
দীর্ঘ দেড় বছর পরে স্কুল খুলল। মঙ্গলবার রাজ্যের নানা প্রান্তে শহরের স্কুলগুলোতে উপস্থিতি কিছুটা ভাল হলেও গ্রামের স্কুলগুলোতে পড়ুয়া কম এল।
যেমন শিলিগুড়ি শহরে স্কুলগুলোতে ৫০ শতাংশের বেশি ছাত্রছাত্রী ছিল। কিন্তু মহকুমার বেশিরভাগ স্কুলে উপস্থিতির হার খুবই কম। কোচবিহারের প্রত্যন্ত এলাকায় কোনও স্কুলে হাজিরার হার পনেরো শতাংশ, কোথাও কুড়ি শতাংশও ছিল। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে ৯০ শতাংশের বেশি হাজিরা থাকলেও নদিয়ার বেশ কিছু স্কুলে তা নেমে এসেছে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। মুর্শিদাবাদ, হুগলি, হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল বেশ কম। ৪০ শতাংশের বেশি ছাত্র-ছাত্রী এ দিন আসেনি বলে হাওড়া জেলার স্কুল পরিদর্শক অফিস সূত্রে খবর। পুরুলিয়ার হুড়া হাইস্কুলে চারটি শ্রেণির ৪২৭ জন পড়ুয়ার মধ্যে এ দিন ১০৬ জন হাজির ছিল। বাঁকুড়া জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়, স্কুলগুলিতে এ দিন উপস্থিতির হার ছিল প্রায় ৩৭ শতাংশ।
আবার, শহর এলাকাতেও উপস্থিতির হার কম বর্ধমানে। বর্ধমান শহরের প্রাণকেন্দ্র বিসি রোডে অবস্থিত সিএমএস উচ্চ বিদ্যালয়ে এদিন হাজিরা ছিল ৫০ শতাংশ। টাউন স্কুলের হাজিরা ছিল ৫৬ শতাংশ। দুর্গাপুর প্রোজেক্টস বয়েজ হাইস্কুলেও উপস্থিতির হারও ছিল ৫০ শতাংশ। দুর্গাপুর কেমিক্যালস হাইস্কুলে নবম ও দশম শ্রেণির মোট পড়ুয়ার সংখ্যা ৩০ জন। তাদের মধ্যে মাত্র ৭ জন এ দিন এসেছিল। আসানসোলের উপেন্দ্রনাথ স্কুল, বার্নপুরের সুভাষপল্লি বিদ্যানিকেতন-সহ আসানসোল শিল্পাঞ্চলের প্রায় সব স্কুলে এ দিন উপস্থিতির হার ছিল ৪২-৫০ শতাংশ। স্কুল কর্তৃপক্ষগুলি অবশ্য মনে করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই চিত্র স্বাভাবিক হবে।
শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাংশ জানাচ্ছেন, গ্রামের স্কুলগুলির অনেক ছাত্ররাই অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছে। ছাত্রীদের একাংশের বিয়েও হয়ে গেছে। স্কুলে কেন আসেনি পড়ুয়াদের একাংশ, তা জানতে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেবেন বলেও অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, স্কুল বন্ধ থাকাকলীন মিড ডে মিলের চাল বা সাইকেল নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রায় একশো শতাংশ পড়ুয়া উপস্থিত ছিল। ফলে তারা স্কুল ছেড়ে দিয়েছে, তা বলা যাচ্ছে না। আরও কিছু দিন দেখে তবে স্কুল ছুটের ব্যপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চান তাঁরা।
তবে করোনা আবহে সংসাররের কাজ করতে গিয়ে স্কুলে হাজির হতে পারেনি অনেকেই। যেমন ময়নাগুড়ির স্কুল পড়ুয়া মনোজিৎ সরকারের কথায়, ‘‘ঘি-পনির বিক্রি করছি।
আর মনে হয় পড়াশোনা করতে স্কুলে যাওয়া হবে না আমার।’’ আবার প্রতিবন্ধকতা সামলে স্কুলে এল চাকুলিয়া হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ফারজানা বেগমের মতো অনেকে। দিন মজুর পরিবারের মেয়ের বিয়ে দেয় বাড়ির লোকেরা। ফারজানা বলেন, স্কুল যোগ দিতে পেরে খুশি। স্বামী নুর সালামও পাশে দাঁড়িয়েছেন। মালদহে হবিবপুর ব্লকের একাধিক স্কুলের পড়ুয়াদের এ দিন স্কুলে না গিয়ে ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজে কাজ করতে দেখা গিয়েছে।
রাজ্য জুড়ে প্রায় সব স্কুলেই অবশ্য কোভিড বিধি রক্ষা করা হয়েছে কড়া হাতে। প্রায় সব স্কুলেই ‘থার্মাল গান’-এ তাপমাত্রা পরীক্ষার পাশাপাশি দূরত্ববিধি মেনে হাতে হাতশুদ্ধি দিয়ে পড়ুয়াদের এক এক করে গেট দিয়ে ঢোকানো হয়। হিরাপুরের মানিকচাঁদ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্য জানান, স্কুলের গেটের সামনের রাস্তায় কোনও খাবারের দোকান বসার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
তবে পুরুলিয়া শহরের চিত্তরঞ্জন গার্লস হাইস্কুলে এক-একটি বেঞ্চে তিন-চার জন করে ছাত্রীকে বসতে দেখা গিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ক্লাসঘরের অভাব থাকায়
এই পরিস্থিতি।
আবার, এত প্রচার সত্ত্বেও বীরভূমের গ্রামীণ এালাকায় মাস্ক না-পরে বা ব্যাগে বা পকেটে ঢুকিয়ে স্কুলে এসেছিল অনেক পড়ুয়াই। স্কুলের দরজায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কড়াকড়িতে মাস্ক পরেছে তারা। দুবরাজপুর আরবিএসডি স্কুলে ৩৭ জন পড়ুয়া মাস্ক আনেনি বলে জানা গিয়েছে। সকলকেই মাস্ক দিয়েছে স্কুল।
অন্য কিছু জেলার মতো দুই মেদিনীপুরের বিভিন্ন স্কুলেও প্রথম দিনে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেল পড়ুয়ারা। কোথাও করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানানো হল, দেওয়া হল পেন, ফুল, চকলেট, কোথাও দেওয়া হল মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার। স্কুলে আসতে পেরে খুশি অনন্যা সাউ, আদর্শ দাসরা। বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের (বালিকা) নবম শ্রেণির ছাত্রী অনন্যার কথায়, ‘‘ক্লাসঘরে ফিরতে পেরে দারুণ লাগছে।’’ কোনও স্কুলে একটি বেঞ্চপিছু দু’জন পড়ুয়া বসেছে। কোনও স্কুলে তিনটি বেঞ্চ পিছু পাঁচ জন করে।