প্রতীকী ছবি
অস্ত্রোপচারের ঠিক আগে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিল মেয়েটি। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সিপিআর (কার্ডিয়োপালমোনারি রিসাসিটেশন) করার পরে স্বাভাবিক হয় সে। পেট কেটে দেখা যায়, অন্ত্রের কিছুটা অংশে পচন ধরে সেপসিস হয়ে গিয়েছে। তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে সেই পচে যাওয়া নাড়ির অংশ বাদ দেওয়ার পরেও দিন কয়েক ভেন্টিলেশনে এবং এক মাস এসএসকেএমের আইটিইউ-এ থাকতে হয়েছিল তাকে। অবশেষে ৪৯ দিনের মাথায় শনিবার দুই চিকিৎসকের সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের বাড়িতে ফিরল বছর চোদ্দোর ওই কিশোরী।
জন্ম থেকেই মেসোকোলনের এক জায়গায় ফুটো ছিল মেয়েটির। সেখান দিয়েই খাদ্যনালীর ক্ষুদ্রান্ত্রের কিছুটা ঢুকে পচে গিয়েছিল। বিতানকুমার চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আট জন চিকিৎসকের একটি দল এই অস্ত্রোপচার করে। ওই দলের সদস্য পবন মণ্ডল জানাচ্ছেন, একে ‘মেসোকোলিক হার্নিয়া’ বলে। অস্ত্রোপচার করে ক্ষুদ্রান্ত্রের ন’ফুট জেজুনামের মধ্যে আট ফুটই বাদ দিয়ে খাদ্যনালী জুড়ে দিতে হয়েছে। অস্ত্রোপচারের সময়ে তিন লিটার রক্ত বেরিয়ে গিয়েছিল। খুব সাবধানে থাকতে হয়েছিল অস্ত্রোপচার-পরবর্তী দিনগুলিতেও। প্রথম তিন দিন ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন আরও এক বার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয় মেয়েটি।
হাটে কাপড় বেচে সংসার চালান ময়না ব্লকের বাসিন্দা বিবেকানন্দ দাস। মেয়েকে যে সুস্থ করিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এখনও ভাবতে পারছেন না তিনি। ফেরার দীর্ঘ পথে দুই চিকিৎসক সঙ্গে থাকায় একই সঙ্গে বিস্মিত এবং কৃতজ্ঞ বিবেকানন্দবাবু। তাঁর কথায়, “মাত্র দু’দিনের পেটের যন্ত্রণায় এত বড় কিছু হতে পারে ভাবতে পারিনি। মেয়েটাকে ডাক্তারবাবুদের জন্যই ফিরে পেলাম।”
শল্য চিকিৎসক নীপাঞ্জন ঘোষ বলছেন, “পেটের ভিতরের হার্নিয়া সচরাচর শোনা যায় না। ফলে ভিতরের পচা অংশ থেকে সেপসিস হয়ে গেলে মৃত্যুর আশঙ্কা তো থাকবেই। কারণ, খাদ্যনালীতে চাপ না পড়া পর্যন্ত যন্ত্রণাও বোঝা যায় না। এমন অসময়েও এত বড় সমস্যার সুষ্ঠু চিকিৎসা হওয়াটা সব দিক থেকেই ইতিবাচক।”