Buddhadeb Bhattacharjee Condolence Meeting

স্মরণসভায় যতটা বুদ্ধদেব, ততটাই আরজি কর, তাঁর স্লোগানেই দলকে ঝাঁকুনি দিতে চাইল বঙ্গ সিপিএম

স্মরণসভায় ছিলেন বুদ্ধদেবের স্ত্রী মীরা এবং সন্তান সুচেতনও। যদিও তাঁরা কেউই মঞ্চে ওঠেননি। রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘মীরাদি মঞ্চে আসতে চাইছেন না। উনি নীচ থেকেই শুনবেন।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৪ ১৯:৪৪
Share:

(বাঁ দিকে) নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভায় বক্তৃতা করছেন বিমান বসু। জমায়েতের একাংশ (ডান দিকে)। ছবি: ফেসবুক এবং শোভন চক্রবর্তী।

নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের গ্যালারির গর্জনে বৃহস্পতিবার যতটা রইলেন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ততটাই রইল আরজি কর হাসপাতাল। এক এক সময় ‘কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য লাল সেলাম’ গর্জনকে ছাপিয়ে গেল ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ স্লোগান। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতার স্মরণসভার একেবারে শেষে এ-ও শোনা গেল, ‘স্মরণসভার একটাই স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর’।

Advertisement

বেলা আড়াইটের সময় স্মরণসভা শুরুর নির্ধারিত সময় থাকলেও তা শুরু হয়েছিল মিনিট কুড়ি পরে। শুরুতেই বুদ্ধদেবের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে একটি ভিডিয়ো দেখানো হয়। যেখানে স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য বলেছেন বুদ্ধদেবের সাহিত্যানুরাগের কথা। জানিয়েছেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিষয়ে বুদ্ধদেব কয়েক বছর আগে একটি উপন্যাস লেখার কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্যই তা আর শেষ করে যেতে পারেননি। ভিডিয়ো শুরুর সময়ে ইন্ডোরের গ্যালারির অনেকটাই ফাঁকা ছিল। কিন্তু ১৫ মিনিটের ভিডিয়ো শেষ হতে হতেই দেখা যায় গ্যালারি ভরে গিয়েছে। সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, তাঁদের আশা মতোই ভিড় হয়েছিল স্মরণসভায়। বুদ্ধদেবের লেখা কয়েকটি বই স্মরণসভার জন্য অতিরিক্ত ছাপিয়েছিল সিপিএমের প্রকাশনা সংস্থা। বাইরের স্টলে সেই বইও বিকিয়েছে দেদার। বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে বুদ্ধদেবের ছবি দেওয়া ব্যাজ এবং চাবির রিংও।

স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: শোভন চক্রবর্তী।

স্মরণসভায় ছিলেন বুদ্ধদেবের সন্তান সুচেতনও। যদিও মীরা এবং সুচেতন কেউই মঞ্চে ওঠেননি। পরে রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘মীরাদি মঞ্চে আসতে চাইছেন না। উনি নীচ থেকেই শুনবেন।’’ বক্তার তালিকা ছিল সংক্ষিপ্ত। বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র এবং সেলিম। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিন দিন আগে শ্বাসনালিতে সংক্রমণের কারণে তাঁকে দিল্লির এমসে ভর্তি করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবারেই তাঁকে আইসিইউ থেকে সাধারণ বেডে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরেই একটি ভিডিয়োবার্তা রেকর্ড করে পাঠান সীতারাম। গত ৮ অগস্ট বুদ্ধদেব প্রয়াত হন। ৯ অগস্ট ছিল তাঁর শেষযাত্রা। সেই সময়েও চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য সীতারাম কলকাতায় আসতে পারেননি।

Advertisement

সতীর্থ সম্পর্কে বলতে উঠে বিমান মূলত বুদ্ধদেবের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং রাজনৈতিক রুচিশীলতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। সূর্যকান্ত বলেন, ‘‘যখন বুদ্ধদাকে প্রথম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল, তখন আমি রাজ্য সম্পাদক। যে সময়ে খবর পাই, তখন আমি বাইরে। জ্ঞান ফেরার পর বুদ্ধদা কিছুতেই হাসপাতালে থাকতে চাইছিলেন না। শেষ পর্যন্ত আমাকে যেতে হয়। আমাকেও সটান বলে দেন, ‘মাই লাইফ ইজ় মাই লাইফ!’ (আমার জীবনটা আমারই জীবন)। আমি আরও দৃঢ় ভাবে বলি, ‘ইয়োর লাইফ ইজ় নট ইয়োর লাইফ। নট ইয়োর প্রপার্টি। ইট্‌স পার্টি প্রপার্টি। তার পরে ওঁকে ঠান্ডা করা গিয়েছিল।’’

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভায় ছিলেন বুদ্ধদেবের স্ত্রী মীরা এবং সন্তান সুচেতনও। ছবি: শোভন চক্রবর্তী।

বুদ্ধদেবের স্মরণসভা ছিল সিপিএমের রাজ্য কমিটি আহূত। তবে বামফ্রন্টের নেতাদেরও ডাকা হয়েছিল। ছিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য, প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানও। দীর্ঘ ক্ষণ মান্নানের পাশেই বসে থাকতে দেখা গেল সেলিমকে। বামফ্রন্টের বাইরের বামদল হিসাবে এসএউসি, সিপিআই-এমএল লিবারেশন নেতৃত্বও ছিলেন স্মরণসভায়। প্রাক্তন নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়ও এসেছিলেন। ছিলেন বাংলার এনসিপি এবং আরজেডি নেতৃত্বও। আর সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতীরা। সিপিএমের আমন্ত্রণে এসেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, প্রাক্তন ক্রিকেটার স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়, সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফুটবলকর্তা অনির্বাণ দত্ত। নজর কেড়েছে সিপিএমের কর্মসূচিতে গত কয়েক বছর ধরে ‘রাজ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত লোপামুদ্রা মিত্রের গানও। তবে সিপিএমের মধ্যে কোনও কোনও ‘সন্দিগ্ধু’ স্মরণসভা চলাকালীনই ফিসফিসে প্রশ্ন তুললেন, কেন বুদ্ধদেবের স্মরণসভায় সামনের সারিতে থাকবেন সৌরভ? কেন তাঁর পরের সারিতে বসতে হবে আমতায় মৃত ছাত্রনেতা আনিস খানের বাবা সালেম খানকে? সিপিএম নেতারা অবশ্য সে সব মন্তব্যকে ‘অমূলক’ বলছেন।

শেষ বক্তৃতা করেন সেলিম। বলেন, ‘‘দোষে-গুণেই মানুষ। কেউ কখনও ১০০ শতাংশ ঠিক হতে পারে না। তবে বুদ্ধদা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার মধ্যে কোনও অসততা ছিল না। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল নতুন বাংলা গড়ে তোলার। যে বাংলা পরবর্তী প্রজন্মকে নিজের পায়ে দাঁড় করাত।’’

সিপিএমের অনেকেই বলেন, বুদ্ধদেবের ‘প্রশাসনিক অদক্ষতা’র কারণেই সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামের ঘটনা। যা ২০১১ সালে বাম সরকারের পতনকে সুনিশ্চিত করেছিল। তবে স্মরণসভায় বুদ্ধদেবের শিল্পায়নের স্বপ্নকেই সামনে রাখতে চেয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

২০১৫ সালের ব্রিগেডে শেষ বার ভাষণ দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। সেই সমাবেশে তাঁর শেষ কথা ছিল, ‘‘এ লড়াই লড়তে হবে, এ লড়াই জিততে হবে।’’ বুদ্ধদেবের স্মরণসভায় সেলিমেরও শেষ উক্তি হয়ে রইল, ‘‘এ লড়াই লড়তে হবে, এ লড়াই জিততে হবে।’’ এখন ‘লড়াই’ মানে কী? নেতাজি ইন্ডোরের গ্যালারির গর্জন জানিয়ে দিল— ‘আরজি কর, আরজি কর’!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement