‘আসল’ সন্দীপ সাধুখাঁ (ছবিতে বাঁ দিকে)-র বাড়িতে ইডি আধিকারিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
১০০ দিনের কাজে ‘দুর্নীতি’র খোঁজ চালাতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল ইডিকে। কারণ, মঙ্গলবার সকালে জনৈক ব্যবসায়ী সন্দীপ সাধুখাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালাতে হুগলির জেলার চুঁচুড়ার ময়নাডাঙার একটি ঠিকানায় পৌঁছে গিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। কিন্তু তল্লাশি শুরু হওয়ার আগেই তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, তাঁরা যে সন্দীপকে খুঁজছেন, ইনি সেই সন্দীপ নন। তার পরই ‘আসল’ সন্দীপের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছিল ইডি। অবশেষে হুগলি জেলারই চন্দনগরের একটি ঠিকানায় সেই সন্দীপের বাড়ি খুঁজে পেল ইডি। বাড়িতে স্ত্রী এবং এবং বৃদ্ধা মা থাকলেও সন্দীপ ছিলেন না।
ইডি আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন, সন্দীপ আগে ধনিয়াখালির বেলমুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক পদে কর্মরত ছিলেন। এখন তিনি খানাকুলের জগৎপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক। মঙ্গলবার সকালে তাঁর চন্দনগরের বাড়িতে গিয়ে ইডি আধিকারিকেরা দেখেন, সেখানে রয়েছেন সন্দীপের বৃদ্ধা মা মলিনাদেবী এবং স্ত্রী মৌসুমী সাধুখাঁ।
মঙ্গলবার সকালে প্রথমে চুঁচুড়ার ময়নাডাঙায় সন্দীপ সাধুখাঁ নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে যায় ইডি। নাম আর পদবি এক হওয়ায় বিভ্রান্তির জেরে ভুল ঠিকানায় যাওয়া হয়েছে বুঝতে পেরেই গাড়ি ঘোরায় ইডি। সিঙ্গুর হয়ে পৌঁছয় হরিপালে। সেখান থেকে ঘুরে আবার যায় চুঁচুড়ার খাদিনা মোড়ের দিকে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে ঘোরাঘুরি করে সোয়া ১২টা নাগাদ চন্দননগরে আসল সন্দীপের বাড়িতে পৌঁছয় তারা। দু’জন প্রতিবেশীকে ডেকে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকেছেন ইডি আধিকারিকেরা। বাড়ির বাইরে মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা।
সন্দীপের মা মলিনাদেবী বলেন, “সন্দীপের বাবা অমল সাধুখাঁ ২০০৮ সালে মারা যান। তিনি রেলে চাকরি করতেন। ছেলে তার আগেই পঞ্চায়েতে চাকরি পায়। ১৯৮৪ সালে এখানে জমি কিনে বাড়ি করে। ইডি কেন এল, কিসের তদন্ত, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। সন্দীপের স্ত্রী মৌসুমী বলেন, “আমার স্বামী আগে ধনিয়াখালির বেলমুড়ি পঞ্চায়েতে নির্মাণ সহায়ক পদে চাকরি করতেন। বর্তমানে খানাকুলের একটি পঞ্চায়েতে আছেন। প্রতি দিনের মতো আজ সকালেও তিনি কাজে বেরিয়ে যান। বাড়িতে ইডি অফিসারেরা এসে জিজ্ঞাসা করে আমার স্বামীর কথা। তখন আমি তাঁদের ফোন নম্বর দিই। তাঁরা স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।”
মঙ্গলবার সকালে এক সঙ্গে রাজ্যের চার জায়গায় হানা দেয় ইডি। তল্লাশি শুরু হয় উত্তর ২৪ পরগনার সল্টলেকের একটি আবাসন, ঝাড়গ্রামের একটি সরকারি আবাসন, মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে এক পঞ্চায়েত কর্তার বাড়ি এবং হুগলির চুঁচুড়ায়। ইডি সূত্রে জানা যায়, ১০০ দিনের কাজের ‘দুর্নীতি’র তদন্তে এই তল্লাশি অভিযান চলছে। ওই সূত্র মারফত আরও জানা যায়, আগেই এই দুর্নীতির বিষয়ে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানায় দু’টি এবং হুগলির ধনেখালি থানায় একটি এফআইআর দায়ের হয়েছিল। তা ছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য থানায় দু’টি এফআইআর দায়ের হয়। মোট পাঁচটি এফআইআর-এর ভিত্তিতে ইসিআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে ইডি। প্রসঙ্গত, এই প্রথম এই বিষয়ের তদন্তে নামল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি।