বিশ্বভারতী। —ফাইল চিত্র
বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্য ভবনগুলির নিয়মিত সংস্কারের দায়িত্ব আর নিতে রাজি নয় ভারত সরকারের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ (এএসআই)। বুধবার রাজ্যসভার জ়িরো আওয়ারে এ কথা জানান রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রাজ্যভায় জানান, বিশ্বভারতীর
উত্তরায়ণ প্রাঙ্গণে কবির স্মৃতিবিজড়িত উদয়ন, পুনশ্চ, উদীচি, কোণার্ক, শ্যামলীর মতো বাড়িগুলি অপরূপ স্থাপত্যের নিদর্শন।
ঋতব্রতের দাবি, এএসআই এই ভবনগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল। সম্প্রতি তারা কাজ বন্ধ করেছে এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন ওই সব ভবনের দায়িত্ব তারা নিতে পারবে না। সাংসদ এ দিন বলেন, ‘‘পর্যটকদের জন্য কোণার্ক বাড়ির ভিতরে থাকা সংগ্রহশালা বন্ধ। সম্প্রতি উদয়নবাড়ির দোতলায় ‘কবিকক্ষ’-এর ছাদ থেকে চাঙড় ভেঙে পড়েছে। এই ঘরে কবির ব্যবহার করা অনেক জিনিসপত্র রয়েছে।’’
বিশ্বভারতীর এক আধিকারিক জানান, আশ্রম চত্বরের বেশির ভাগ অংশই হেরিটেজ হিসেবে ঘোষিত। উত্তরায়ণের ওই পাঁচটি বাড়ি ছাড়াও ছাতিমতলা, উপাসনাগৃহ, চৈতি বাড়ি, শান্তিনিকেতন গৃহ, দ্বিজবিরাম, সন্তোষালয়-সহ বেশ কিছু জায়গার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এএসআইয়ের। সূত্রের খবর, পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ তাদের চিঠিতে জানিয়েছে, নিয়মিত সংস্কারকাজ চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয় লোকবলের অভাবে। ছোটখাট সংস্কারকাজ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষই করতে পারেন।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপ-রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু এ বছর অগস্টেই শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন। সংস্কারের জট কাটিয়ে নতুন করে সাজিয়ে তোলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শ্যামলী বাড়ির দ্বারোদ্ঘাটন করেন উপরাষ্ট্রপতি। সেই প্রসঙ্গ তুলে এ দিন ঋতব্রত উপরাষ্ট্রপতিকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার আর্জি জানান। সাংসদের কথায়, ‘‘এএসআইয়ের সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। কারণ, কবি-স্মতির ঐতিহ্যপূর্ণ ভবনগুলির ঠিকঠাক সংস্কারের জন্য ভাল পরিমাণ অর্থ যেমন প্রয়োজন, তেমনই চাই সেই কাজের উপযুক্ত দক্ষতা।’’ এই অবস্থায় এএসআই রক্ষণাবেক্ষণ থেকে হাত তুলে নিয়ে ওই ভবনগুলি ঠিকমতো রাখাই মুশকিল হবে। গত কয়েক মাসে মূল্যবান বেশ কিছু আসবাব রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়েছে বলেও ঋতব্রতের দাবি।
সব শুনে রাজ্যসভার নেতা থাওর চন্দ্র গহলৌতকে বিষয়টি সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে পাঠাতে বলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ঋতব্রত যা বলেছেন, তা সত্যি। এটা গুরুত্ব দিয়েই দেখা উচিত।’’