অতিমারিতেও বন্ধ নেই পড়া। নিজস্ব চিত্র
করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ দীর্ঘদিন। প্রত্যন্ত গ্রামের অনেকেরই অনলাইন শিক্ষার সুযোগ নেই। কঠিন এই সময়ে পিছিয়ে থাকা এলাকার পড়ুয়ারা আরও পিছিয়ে যাচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়াতে চারজন শিক্ষক-শিক্ষিকা মিলে শুরু করেছেন ‘অসময়ের পাঠশালা’।
পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির ঘৃতগ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব ও পশ্চিম দরবার মেলা ও ভাল্কিশোল, এই তিনটি গ্রামে ওই ‘পাঠশালা’ চলছে। শুরু হয়েছে ৩ অগস্ট থেকে।
তিনটি জায়গাতেই সপ্তাহে চারদিন বিকেলে দু’ থেকে-আড়াই ঘন্টা করে পড়ানো হচ্ছে। তিনটি জায়গা মিলিয়ে প্রাক্ প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ জন পড়ুয়া বিনামূল্যে পড়ছে এখন। তাদের অধিকাংশই দরবার মেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী। পঞ্চম
শ্রেণির অর্চনা টুডু, রঞ্জন শীট, জয়শ্রী মাহালি, চতুর্থ শ্রেণির বিনন্দ কালন্দি, রতন মাহালিদের অনেকেই আবার প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। স্কুল বন্ধ মানে এমন পড়ুয়াদের পড়াশোনার সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন। এই সার সত্যিটা বুঝেই দরবার মেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের
এই উদ্যোগ।
যাঁরা এই ‘পাঠশালা’য় পড়াচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে ভাল্কিশোলের রাধেশ্যাম মাহাতো নিজে অভিভাবকও বটে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন পূর্ব দরবার মেলার অরূপ দে ও পশ্চিম দরবার মেলার সতীশ শীট নামে আরও দু’জন অভিভাবক। রাধেশ্যাম, অরূপ ও সতীশের বাড়িতেই চলছে পঠনপাঠন। অরূপ বলেন, ‘‘মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনা একপ্রকার বন্ধ। পড়ুয়াদের সঙ্গে শিক্ষকদের যোগাযোগ নেই দীর্ঘদিন। অসময়ের এই পাঠশালায় শিক্ষক-পড়ুয়া সম্পর্ক নতুন করে গড়ে উঠছে। পাশে থাকতে পেরে আমারও ভাল লাগছে।’’
রাধেশ্যাম ছাড়াও পড়াচ্ছেন নারায়ণগড়ের বহুরূপার বন্দনারানি পাল, কেশিয়াড়ির খাজরার প্রবীরকুমার ভট্টাচার্য ও বড়ামারার প্রশান্তকুমার জানা। তাঁরা জানালেন, স্কুল না চালু থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের যে খামতি হচ্ছে সেটা কী ভাবে পূরণ করা যায়, সেই ভাবনা থেকেই এই পাঠশালার শুরু। এই ‘অসময়ের পাঠশালা’ পাঠাশালা সময় স্বাভাবিক হলেও চলবে বলে জানাচ্ছেন উদ্যোগীরা। কারণ, প্রায় দু’বছরের ক্ষতি পূরণ তো সহজ কথা নয়!