ঝালাপালা: বনগাঁ শহরের রাস্তাঘাটে এ ভাবেই বাঁধা থাকে চোঙা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
কয়েক বছর ধরে শব্দ ও বায়ু দূষণে জেরবার বনগাঁ শহরের মানুষ। পুরভোটের প্রাক্কালে তাঁরা এই ধরনের দূষণের হাত থেকে মুক্তি চাইছেন। বাসিন্দাদের আবেদন, ভোটে জিতে যে দলই পুরবোর্ড গঠন করুক, তারা যেন শহরকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে।
পথে বেরিয়ে তারস্বরে বাজা চোঙার আওয়াজে নাজেহাল হওয়াটা এখানকার মানুষের দৈনন্দিন রুটিন হয়ে গিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাস-ট্রাকের কান ফাটানো এয়ারহর্ন। সে সব গাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া বেরিয়ে দূষিত করছে বাতাস। এ ছাড়া, প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার শহরের নিকাশিকে বিপদে ফেলছে। পুরভোট আসায় চোঙার দাপট বেড়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কোনও কোনও দিন শহরে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে মাইক-চোঙা বাজে। পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগায় এ সব হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাবলে অভিযোগ। রাজনৈতিক দলগুলিও এ নিয়ে উদাসীন।
শহরের রাস্তাগুলির দিকে চোখ রাখলেই দেখা যায়, যত্রতত্র চোঙা বাঁধা। বছরভর এ ভাবেই চলে। শীতের সময়ে তা আরও বেড়ে যায়। যে কোনও অনুষ্ঠানের বহু আগে থেকে মাইকে প্রচার শুরু হয়। শহরবাসীর কান ঝালাপালা হতে থাকে। বনভোজন, জলসাতেও চলে সাউন্ড বক্সের তাণ্ডব। এক-একটি অনুষ্ঠানের জন্য ২০-৩০টি চোঙা বাঁধা হয়।
শান্তিতে বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়ার জো নেই। পথেঘাটে আড্ডাও দিতে অসুবিধা হয়। দোকানে মালপত্র কেনা-বেচার সময়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা কথা শুনতে-বুঝতে সমস্যায় পড়েন। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সমস্যা হয় মাইকের দাপটে। পথে বেরোলে মোবাইলের রিং টোন শোনা যায় না।
এ ছাড়া আছে এয়ারহর্নের দাপট। মিঠু অধিকারী নামে এক মহিলার কথায়, ‘‘তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে ভ্যানে যাচ্ছিলাম। পিছন থেকে একটি বাস এত জোরে হর্ন বাজাল, ছেলে ভয়ে কাঁদতে শুরু করল।’’ পেট্রাপোল সীমান্তের দিকে যাতায়াত করা ট্রাক এয়ার হর্ন বাজিয়ে বেপরোয়া ভাবে ছুটে চলে বলে অভিযোগ। বাস চালকেরা একে অন্যকে টেক্কা দিতে রেষারেষি করে। তখনও তারা তীব্র স্বরে এয়ারহর্ন বাজায়। অতীতে সচেতন বাসিন্দারা শব্দদূষণ প্রতিরোধ মঞ্চ তৈরি করে মানুষকে সচেতন করার কর্মসূচি নিয়েছিলেন। শহরে মিছিল বের হয়। মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিলি হয়েছে এর আগে। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর তরফে পুলিশ-প্রশাসন এবং পুরসভার কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছিল। এপিডিআর-এর বনগাঁ শাখার সম্পাদক অজয় মজুমদার বলেন, ‘‘নতুন পুরবোর্ডের কাছে আবেদন থাকবে, মিটিং পথসভায় ১০০টি চোঙা না বাজিয়ে, সভাস্থলের আশপাশে চোঙার সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হোক। গাড়ির কালো ধোঁয়া বের করা বন্ধ করতে হবে।’’ সিপিএম নেতা পীযূষকান্তি সাহা বলেন, ‘‘শহরে শব্দ ও বায়ুদূষণ ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের কোনও দৃষ্টি নেই। বরং উৎসাহ দিচ্ছে।’’
বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক, তৃণমূলের গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘দূষণ রুখতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কড়া পদক্ষেপ করে শহরে এয়ারহর্ন বাজানো সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেব। ট্রাক থেকে যাতে কালো ধোঁয়া বের না হয়, সে দিকে নজর রাখা হবে। শহরে চোঙার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ
করা হবে।’’