শাহজাহান শেখ। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
ইডি আধিকারিক ও সংবাদমাধ্যমকে পেটানোর পর কেটে গিয়েছে ১১ দিন। সন্দেশখালিকাণ্ডে এখনও অধরা তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। এ নিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় তখন মঙ্গলবার ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ মন্তব্য করলেন তৃণমূলের এক তরুণ মুখপাত্র।
শাসক তৃণমূলের মুখপাত্রদের ‘আনুষ্ঠানিক’ প্যানেলভুক্ত ঋজু দত্ত এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে দাবি করেছেন, শাহজানের গ্রেফতার এখন সময়ের অপেক্ষা! তবে বিজেপি শাহজাহান নিয়ে যা যা বলছে, তাকেও বিঁধেছেন শাসকদলের এই মুখপাত্র। পাশাপাশি টেনে এনেছেন হাওড়ার সাঁকরাইলে বিজেপির মহিলা নেত্রীর বাড়িতে গাঁজা মজুত রাখার অভিযোগে ধৃত বিজেপির পঞ্চায়েত স্তরের নেতার প্রসঙ্গও।
ঘটনাচক্রে, সন্দেশখালিকাণ্ডের কয়েক দিন পরেই রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার বলেছিলেন, ‘‘যে বা যারা আইন হাতে তুলে নিয়েছে, তারা কেউই ছাড়া পাবে না। সকলের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ ডিজির ওই মন্তব্যের পর থেকেই বিভিন্ন মহলে বলা হতে থাকে, এ বার শাহজাহানের গ্রেফতারি নিশ্চিত। সন্দিগ্ধুরা অবশ্য বলেছিলেন, ডিজি নিশ্চিত করে শাহজাহানের নাম বা প্রসঙ্গ বলেননি। তিনি শুধু বলেছিলেন, যারা আইন হাতে নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই অর্থে দেখতে গেলে আইন হাতে নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডিও! সেই মর্মে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। ফলে রাজীবের বক্তব্যে একটা ‘প্যাঁচ’ থেকে থাকলেও থাকতে পারে বলেই প্রশাসনিক মহলের অনেকে মনে করছেন। তবে শাসকদলের তরুণ মুখপাত্র অত প্যআঁচ-পয়জারের ধার ধারেননি। তিনি সরাসরিই শাহজাহানের নাম করে পোস্ট করেছেন।
ঋজু লিখেছেন, ‘‘শাহজাহানকে বঙ্গ পুলিশ ও কেন্দ্রীয় সংস্থা খুঁজছে, তাঁর গ্রেফতারি সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু বিজেপির নেতারা যখন বড় বড় কথা বলে, আগে জবাব দিক— কেন বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ি থেকে ৪১ কেজি গাঁজা পাওয়া গেল? আর শুভেন্দু, সুকান্ত ও দিলীপবাবুর ওর সাথে কী সম্পর্ক?’’ শাসকদলের মুখপাত্র যখন বলছেন ‘শাহজাহানের গ্রেফতারি সময়ের অপেক্ষা’, তখন তা কি ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ নয়? আনন্দবাজার অনলাইনকে ঋজু বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশ ওঁকে খুজছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা ওঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছে। এটা তো স্বাভাবিক যে, আজ না হোক কাল শাহজাহানকে ধরা যাবেই!’’
তৃণমূল মুখপাত্রের পোস্ট। —সংগৃহীত।
শাহজাহান এখনও পর্যন্ত অন্তরালে। কিন্তু সোমবার তিনি আইনজীবী মারফত কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন করেন, ইডি যে মামলা দায়ের করেছে, তাতে তিনি ‘পক্ষ’ হতে চান। উল্লেখ্য, সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাহিনী যা ঘটিয়েছিল, তা নিয়ে শাসকদল যে তাঁর সমালোচনা করেছিল এমন নয়। তৃণমূলের পক্ষ থেকে শুধু বলা হয়েছিল, ওই ঘটনা ‘অনভিপ্রেত’। কিন্তু গোটা ঘটনার নেপথ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ‘উস্কানি’ দেখেছিল তৃণমূল। তার পর ১১ দিনের মাথায় তৃণমূলের মুখপাত্র লিখিত ভাবে বললেন, শাহজাহানের গ্রেফতারি সময়ের অপেক্ষা। ঋজুর ওই পোস্টের ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই জানা যায় সন্দেশখালিকাণ্ডে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট গ্রেফতারির সংখ্যা দাঁড়াল সাত।
সন্দেশখালি-১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ শাহজাহান কোথায় তা নিয়ে নানা জল্পনা রয়েছে। বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর দাবি করেছেন, শাহজাহান নাকি মায়ানমারে পালিয়ে গিয়েছেন! তবে শাহজাহানের নাম না করলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক দিন আগেই বার্তা দিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার নিরপেক্ষ ভাবেই কাজ করছে। অতীতের উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘কাশ্মীরের বাতালিক থেকে সারদার মালিক সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছিল রাজ্য পুলিশই।’’ এখন দেখার শাহজাহান কবে গ্রেফতার হন। কবে শেষ হয় সময়ের অপেক্ষা।